
রাশিয়া নতুন ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, ‘পসাইডন’ নামের পারমাণবিক শক্তিচালিত সুপার টর্পেডোর পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এটি সমুদ্রের নিচে ভয়াবহ তেজস্ক্রিয় ঢেউ তৈরি করতে সক্ষম, যা উপকূলীয় এলাকা ধ্বংস করতে পারবে।
বিবিসি শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
পুতিনের মতে, এই ধরনের অস্ত্র বিশ্বের অন্য কোনো দেশের কাছে নেই। গ্রিক পুরাণের সমুদ্রদেবতা পসাইডনের নামে নামকরণ করা এই টর্পেডোকে বলা হচ্ছে ড্রোন ও পারমাণবিক টর্পেডোর সংমিশ্রণ। রুশ পার্লামেন্টের এক জ্যেষ্ঠ সদস্য দাবি করেছেন, এটি পুরো একটি রাষ্ট্রকে অচল করতে সক্ষম।
পসাইডনের কথা প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০১৮ সালে। তখন জানা যায়, এটি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে এবং পথ পরিবর্তন করতে সক্ষম, যা এটিকে আটকানো প্রায় অসম্ভব করে তোলে।
এর আগে ২১ অক্টোবর রাশিয়া ‘বুরেভেস্তনিক’ নামের পারমাণবিক চালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষারও ঘোষণা দেয়। রাশিয়ার দাবি, এটি বিশ্বের যে কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে পারে। ন্যাটো এটিকে ‘এসএসসি-এক্স-৯ স্কাইফল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়ার এসব ঘোষণা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। ব্রিটিশ রাশিয়া-বিশেষজ্ঞ মার্ক গ্যালিওটি বিবিসিকে বলেন, “পসাইডন ও বুরেভেস্তনিক মূলত ‘আর্মাগেডন অস্ত্র’, ব্যবহার মানেই পৃথিবীর বড় ধ্বংস। এগুলো ‘সেকেন্ড-স্ট্রাইক’ বা প্রতিশোধমূলক হামলার জন্য তৈরি।”
রাশিয়ার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ২০১৯ সালে একটি রকেট ইঞ্জিন বিস্ফোরণে পাঁচজন রুশ পারমাণবিক প্রকৌশলী নিহত হন; ধারণা করা হয়, এটি বুরেভেস্তনিক প্রকল্পের অংশ ছিল। আন্তর্জাতিক কৌশল গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইআইএসএস জানিয়েছে, পারমাণবিক প্রোপালশন প্রযুক্তিতে রাশিয়ার এখনও বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।
পুতিন ২০১৮ সালে যে ‘অজেয় অস্ত্রের’ তালিকা প্রকাশ করেছিলেন, তাতে পসাইডন ও বুরেভেস্তনিক ছিল। সাত বছর পর আবার এগুলো সামনে আনা বিশেষজ্ঞদের মতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি সংলাপ ভেস্তে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে পুতিনের এই অস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা বিশেষজ্ঞদের মতে নিজের শক্তি প্রদর্শন ও আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের প্রচেষ্টা।