
নেপালের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হিমালয়ের একটি পাহাড়ে ভয়াবহ তুষারধসে অন্তত সাতজন পর্বতারোহী প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন বিদেশি নাগরিক এবং দুইজন স্থানীয় গাইড রয়েছেন বলে জানিয়েছে অভিযানে যুক্ত সংস্থা সেভেন সামিট ট্রেকস।
সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে দোলাখা জেলার ইয়ালুং রি পর্বতের বেস ক্যাম্পের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে। উদ্ধারকর্মীরা এখন পর্যন্ত দুটি মরদেহ উদ্ধার করেছেন, আর বাকিদের খোঁজে অভিযান চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও পাঁচজন প্রায় ১০ থেকে ১৫ ফুট গভীরে বরফের নিচে চাপা পড়েছেন।
সেভেন সামিট ট্রেকসের চেয়ারম্যান মিংমা শেরপা বলেন, “অন্য পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধারে সময় লাগবে, কারণ তারা গভীর বরফের নিচে চাপা পড়ে আছেন।”
দোলাখা জেলার পুলিশ প্রধান বিবিসি নেপালিকে জানান, তুষারধসের প্রায় এক ঘণ্টা আগে পর্বতারোহীরা তাদের যাত্রা শুরু করেছিলেন।
দুর্ঘটনায় আহত আটজনকে হেলিকপ্টারে করে কাঠমান্ডু নেওয়া হয়েছে, যেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে। নিহতদের মধ্যে দুইজন ইতালীয়, একজন কানাডীয়, একজন জার্মান, একজন ফরাসি এবং দুইজন নেপালি গাইড রয়েছেন।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা গ্যান কুমার মহাতো জানান, উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার ইয়ালুং রি বেস ক্যাম্প থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার দূরত্বে না গাঁও এলাকায় অবতরণ করেছে।
আহতদের একজন নেপালের ডেইলি কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেন, তারা বারবার সাহায্যের জন্য ফোন করলেও উদ্ধার দল সময়মতো পৌঁছায়নি।
“যদি উদ্ধার অভিযান সময়মতো আসত, আরও কয়েকজনের প্রাণ রক্ষা করা যেত,” বলেন তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তা মহাতো জানান, খারাপ আবহাওয়া এবং লজিস্টিক জটিলতার কারণে উদ্ধার তৎপরতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এতে হেলিকপ্টার চালানো বা স্থলপথে ঘটনাস্থলে পৌঁছানো উভয়ই কঠিন হয়ে পড়ে।
কাঠমান্ডু পোস্ট জানায়, অভিযাত্রী দলটি মূলত ৬,৩৩২ মিটার উচ্চতার দোলমা খাং পর্বত আরোহনের প্রস্তুতিতে ছিল। অভিযানের অংশ হিসেবে তারা ৫,৬৩০ মিটার উচ্চতার ইয়ালুং রি পর্বতে অভিযোজন অনুশীলনে অংশ নিচ্ছিলেন।
এদিকে নেপালের পশ্চিমাঞ্চলে প্যানবারি পর্বতে আরোহণের সময় নিখোঁজ হন দুই ইতালীয় পর্বতারোহী স্টেফানো ফারোনাতো ও আলেসান্দ্রো কাপুটো। তাদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। একই দলে থাকা ৬৫ বছর বয়সী ভেলটার পারলিনোকে ইতোমধ্যে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রতি বছর শরৎ মৌসুমে নেপালে পর্বতারোহীদের ভিড় বাড়ে, কারণ এ সময় আবহাওয়া তুলনামূলক অনুকূল থাকে। তবে তুষারধস এবং চরম আবহাওয়ার ঝুঁকি তখনও থেকেই যায়। গত সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় ‘মনথা’র প্রভাবে দেশজুড়ে ভারি বৃষ্টি ও তুষারপাতের ফলে হিমালয় অঞ্চলে বহু পর্বতারোহী আটকা পড়েছিলেন।
তাদের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলীয় মুস্তাং এলাকায় আটকে পড়া একদল পর্যটকের মধ্যে দুইজন ব্রিটিশ ও একজন আইরিশ নারী ছিলেন। কয়েকদিন পর তাদেরও সফলভাবে উদ্ধার করা হয়।