
নিউ ইয়র্ক সিটির নতুন মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর জোহরান মামদানি তার বিজয়ী ভাষণে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ঐতিহাসিক ‘ট্রিস্ট উইথ ডেস্টিনি’ বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে তা স্মরণ করেন।
১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পূর্ব প্রেক্ষাপটের সেই ভাষণকে উল্লেখ করে মামদানি বলেন, ‘আজ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আমি জওহরলাল নেহরুর কথা মনে করছি। ইতিহাসে এমন মুহূর্ত খুব কমই আসে, যখন আমরা পুরাতন থেকে নতুনের পথে যাত্রা শুরু করি, যখন এক যুগের সমাপ্তি ঘটে এবং দীর্ঘকাল অবদমিত এক জাতির আত্মা তার উচ্চারণ খুঁজে পায়। আজ রাতে, আমরা পুরাতন থেকে নতুনের দিকে যাত্রা শুরু করেছি।’
তার এই বক্তব্যে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে তার ঐতিহাসিক সচেতনতা, এবং অনেকেই তার বিজয়কে বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
নিউ ইয়র্কের নতুন মেয়র শহরের প্রাথমিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দিতে উত্সাহিত হয়ে ঘোষণা করেন, ‘এটি এমন এক যুগ হবে, যেখানে নিউ ইয়র্কবাসীরা তাদের নেতাদের কাছ থেকে একটি সাহসী স্বপ্ন প্রত্যাশা করবে—যা আমরা বাস্তবায়ন করব; থাকবে না দুর্বলতার কারণে সৃষ্ট কোনো অজুহাত।’
মামদানির পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, দুই মিলিয়নেরও বেশি ভাড়াটিয়ার জন্য ভাড়া স্থগিত করা, বাস পরিষেবাকে দ্রুত ও বিনামূল্যে করা এবং পুরো শহর জুড়ে সার্বজনীন শিশু যত্ন কেন্দ্র গড়ে তোলা।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আরও হাজার হাজার শিক্ষক নিয়োগ করব। আমরা একটি স্ফীত আমলাতন্ত্র থেকে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আনব।’ এছাড়া তিনি নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার একসাথে চলবে বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, ‘আমরা পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করব অপরাধ হ্রাসে এবং একটি “কমিউনিটি সেফটি ডিপার্টমেন্ট” প্রতিষ্ঠা করব, যা মানসিক স্বাস্থ্য ও গৃহহীনতার সংকট সরাসরি মোকাবিলা করবে।’
বিজয়ী ভাষণে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, তার নেতৃত্বে নিউ ইয়র্ক একটি নতুন যুগে প্রবেশ করবে, যেখানে সাহসী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিনির্ধারণের সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া এই তরুণ নেতা ভারত ও আফ্রিকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহন করেন। ১৮ অক্টোবর ১৯৯১ সালে উগান্ডার কাম্পালায় জন্মগ্রহণ করা জোহরান মামদানি হলেন পণ্ডিত মাহমুদ মামদানি এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের পুত্র। তার শৈশব কেটেছে উগান্ডা, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পরে নিউ ইয়র্কে।
২০১৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বোডোইন কলেজ থেকে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং সেখানে ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন (এসজেপি)’ চ্যাপ্টারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে তার অবস্থান তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশে বড় ভূমিকা রেখেছে।
সূত্র: এনডিটিভি