
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সময় পুলিশ চাইলে গুলি চালাতে পারত, তবে তাতে প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল- এমনটাই জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম। তার ভাষ্য অনুযায়ী, সে পরিস্থিতিতে পুলিশি অ্যাকশনে গেলে পালটা সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারত।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ পর্যন্ত যেতে পারত, কিন্তু তা ইচ্ছাকৃতভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ, চার-পাঁচ হাজার মানুষের ভিড়ের বিপরীতে মাত্র ৫০ থেকে ১০০ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে অভিযান চালালে পুলিশ ও সাধারণ মানুষ—উভয়ের হতাহতের ঝুঁকি ছিল।
ডিএমপি সক্ষম কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুলিশ সক্ষম হলেও সব পরিস্থিতিতে সব ঘটনা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তার ভাষায়, স্থান, কাল ও পরিস্থিতি বিবেচনায় অ্যাকশন নিতে হয়; ইচ্ছা করলেই সব জায়গায় ফায়ার ওপেন করা যায় না এবং সেটি সমীচীনও নয়।
গুলির আগে গ্যাস বা সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়নি কেন—এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সেদিন ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি সে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার উপযোগী ছিল না। ভবিষ্যতে বড় জমায়েত হলে কী হবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগাম তথ্য পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হামলার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়া পরিচিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুল তথ্যের বিপরীতে সাংবাদিকদের কাউন্টার প্রচার জনসচেতনতা তৈরিতে সহায়ক হতে পারে।
এদিকে প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার ১৭ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৫ জনকে হাজির করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানা আবেদন মঞ্জুর করেন। বাকি দুই আসামিকে আগেই কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
ডিএমপি জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ডিসি মিডিয়া তালেবুর রহমান জানান, ১৫ জনকে সোমবার এবং দুই জনকে এর আগে কারাগারে পাঠানো হয়।
কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন—মো. নাইম ইসলাম (২৫), মো. সাগর ইসলাম (৩৭), মো. আহাদ শেখ (২০), মো. বিপ্লব (২০), মো. নজরুল ইসলাম ওরফে মিনহাজ (২০), মো. জাহাঙ্গীর (২৮), মো. সোহেল মিয়া (২৫), মো. হাসান (২২), মো. রাসেল (২৬), মো. আব্দুল বারেক শেখ ওরফে আলামিন (৩১), মো. রাশেদুল ইসলাম (২৫), মো. সাইদুর রহমান (২৫), আবুল কাশেম (৩৩), মো. প্রাপ্ত সিকদার (২১) ও মো. রাজু আহমেদ (৩৩)।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১৯ ডিসেম্বর রাত আড়াইটা পর্যন্ত অজ্ঞাতনামা কয়েক হাজার ব্যক্তি বেআইনিভাবে সমবেত হয়ে কারওয়ান বাজারে অবস্থিত প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় দণ্ডবিধি, বিশেষ ক্ষমতা আইন, সাইবার সিকিউরিটি অধ্যাদেশ ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তেজগাঁও থানায় মামলা করা হয়।
অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম জানান, প্রথম আলোর পক্ষ থেকে রোববার মামলা করা হয়েছে। ডেইলি স্টারের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ শেষে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। দুই প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তে থানা পুলিশ, ডিবি, সিটিটিসি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সিসিটিভি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার হওয়া মো. নাইম দেড় লাখ টাকা লুট করেন এবং সেই টাকা দিয়ে টিভি ও টাচস্ক্রিন ফ্রিজ কেনেন। তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা, একটি টিভি ও একটি ফ্রিজ উদ্ধার করা হয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুষ্কৃতকারীদের কোনো দলীয় পরিচয় খোঁজা হচ্ছে না; অপরাধী যে দলেরই হোক, প্রচলিত আইনে বিচার নিশ্চিত করা হবে।
অন্যদিকে আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা গণহারে গ্রেপ্তারের অভিযোগ তুলে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই আসামিদের আটক করেছেন। তারা দাবি করেন, ভিডিও ফুটেজে আসামিদের উপস্থিতির প্রমাণ নেই এবং কয়েকজন আসামি দিনমজুর ও রিকশাচালক। তবে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, সিসিটিভি ও লাইভ ভিডিও বিশ্লেষণ করেই আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে। শুনানির একপর্যায়ে আসামিরা আদালতে বলেন, ‘আমাদের কোনো অপরাধ নেই। সার্চ করে দেখেন, অপরাধ পেলে শাস্তি দেন।’