
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, এবং বিএনপি ইতিমধ্যেই ২৩৭টি আসনের প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবে বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অনেক মিত্র দল এই তালিকায় অনুপস্থিত, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে বাকি ৬৩ আসন খালি রাখা হয়েছে জোট ও শরিকদের জন্য।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, "৬৩ আসনের সবই জোটের জন্য নয়; কিছু আসনে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় সেগুলো এখনও অমীমাংসিত। তবে শরিকদের আসন বরাদ্দে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করা হবে।"
নির্বাচন সংক্রান্ত আইন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী এবার বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা ধানের শীষ প্রতীক পাবেন না, তাদেরকে নিজেদের দলীয় প্রতীকে লড়তে হবে।
এই পরিস্থিতিতে, চার-পাঁচজন নেতাকে বাদ দিলে মিত্রদের বেশিরভাগেরই নিজস্ব ভোটব্যাংক না থাকার কারণে জয়ের সম্ভাবনা কম। ফলে, অমীমাংসিত আসনগুলোতে বিএনপি নিজেদের প্রার্থী বসাতে পারে।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে ৫০টির বেশি দল যুক্ত ছিল। এসব দলের প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা ও এলাকাভিত্তিক অবস্থান যাচাই করে ২৫ থেকে ৩০টি আসন তাদের জন্য রাখা হতে পারে। এছাড়া নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির সঙ্গে জোট হলে আরও প্রায় ১০টি আসন মিত্রদের জন্য খোলা রাখা হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, "আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকা দলগুলোকে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করা হবে। তাদেরকে কোথায় নির্বাচন করানো হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।"
যদিও এখনও জোটের জন্য চূড়ান্ত আসন বরাদ্দ ঠিক হয়নি, তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে যে আন্দোলনে থাকা মিত্ররা ২৫-৩০টি আসন পেতে পারেন।
অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ ছয় নেতার নির্বাচনি এলাকা নির্ধারণের জন্য বিএনপি আগেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। পরে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে নেতাদের প্রার্থিতার বিস্তারিত তথ্য বিএনপিকে জানানো হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২ জন নেতাকে ইতোমধ্যেই তাদের নির্বাচনি এলাকায় কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। তারা হলেন: পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা-১৭ আসনে বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা। বাকি নেতারা হলেন: ঢাকা-১৩ আসনে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক, কুমিল্লা-৭ আসনে দলের মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং ঝিনাইদহ-২ আসনে দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
এনসিপির সঙ্গে জোট হলে বিএনপি তাদের জন্য প্রায় ১০টি আসন ছাড়তে পারে। এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ থেকে, সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১, দক্ষিণের হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঢাকা-১৮, তাসনিম জারা ঢাকা-৯, সারোয়ার তুষার নরসিংদী-২, হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ এবং আদিবুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪ থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।