
যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে অতিরিক্ত ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ এবং শুল্ক সংক্রান্ত হুমকির জবাবে প্রতিষ্ঠানটি এ ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগেও অ্যাপল জানায়, তারা চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, নতুন এই বিনিয়োগ পরিকল্পনা তারই সম্প্রসারিত অংশ।
ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, যদি অ্যাপল আইফোনসহ তাদের অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে না আনে, তাহলে এসব পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। এ প্রেক্ষাপটে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, “প্রতিষ্ঠানটি পূর্ব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করছে এবং এখন আরও বিস্তৃত পরিসরে এগোতে চায়।”
হোয়াইট হাউসে আনুষ্ঠানিক এক ঘোষণায় ট্রাম্প জানান, অ্যাপল যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সরবরাহব্যবস্থায় ব্যাপক অর্থ ব্যয় করতে যাচ্ছে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ডেটা সেন্টার স্থাপন এবং কেন্টাকির হ্যারিসবার্গে স্মার্ট গ্লাস উৎপাদনের একটি নতুন লাইন গড়ে তোলা হবে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি চিপ ও সেমিকন্ডাক্টর পণ্যের ওপর আরোপিত ১০০ শতাংশ শুল্ক এড়িয়ে যেতে পারবে।
এছাড়া ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন, একই ধরনের শুল্ক সুবিধা পেতে হলে অন্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে।
অ্যাপলের প্রধান কুক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের বিনিয়োগ ইতিমধ্যে সুফল দিচ্ছে। নতুন এই তহবিলের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে চাই, বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত অ্যাপল পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এখানেই তৈরি হবে।”
এ সময় কুক ট্রাম্পকে একটি কাঁচের তৈরি শিল্পভাস্কর্য উপহার দেন, যা হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে রেজলিউট ডেস্কে নির্মিত হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, অ্যাপলের জটিল সরবরাহ ব্যবস্থায় তাৎক্ষণিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে এই বিনিয়োগ উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই ঘোষণার পরদিনই শেয়ারবাজারে অ্যাপলের শেয়ারের দাম ৫ শতাংশেরও বেশি বেড়ে যায়।
হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, অ্যাপলের নতুন প্রতিশ্রুতি ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক নীতিমালার সফলতার প্রমাণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা স্বার্থে তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বিবিসি আরও জানায়, অ্যাপলের বেশিরভাগ পণ্য এখনো চীনে উৎপাদিত হলেও দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি কড়াকড়ি হওয়ার পর কোম্পানিটি তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলা পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে পণ্য আমদানির মাধ্যমে শুল্ক কমানোর চেষ্টা করছে তারা।
তবে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া ‘পারস্পরিক শুল্ক’ ব্যবস্থার কারণে অ্যাপল এপ্রিল থেকে জুন—এই তিন মাসেই ৮০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি শুল্ক দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই অঙ্ক আরও বাড়তে পারে এবং ১.১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, হোয়াইট হাউস সম্প্রতি কিছু ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর শুল্ক কমালেও, ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোয় অ্যাপল নতুন চাপের মুখে পড়ে।
টিম কুক আরও জানান, “অ্যাপল দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় পক্ষের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।” মিশিগানে ‘ম্যানুফ্যাকচারিং একাডেমি’ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অ্যাপল যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এমপি ম্যাটেরিয়ালস থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বিরল খনিজ কেনার অঙ্গীকার করেছে।