
ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভা প্রদেশে একটি ইসলামিক স্কুল ভবন ধসে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৯ জন, তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। ধ্বংসস্তূপে এখনও অন্তত ৩৮ জন আটকা আছেন, যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।
ঘটনাটি সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সিদোয়ারজো শহরের আল খোজিনি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুলে ঘটে। নিহত ও আহতদের বেশিরভাগ ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী। তখন তারা নামাজের জন্য জড়ো ছিলেন।
স্থানীয় দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থা জানিয়েছে, দুইতলা ভবনের ওপর আরও দুটি তলা নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে মূল ভিত্তি দুর্বল হওয়ায় ভবনটি ভার বহন করতে না পেরে ধসে পড়ে। ভবনের কিছু অংশে থাকা শিক্ষার্থীরা অক্ষত অবস্থায় বাইরে বের হতে সক্ষম হন।
স্থানীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, পুরো ভবন কংক্রিটের স্তূপে পরিণত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে কান্না ও সাহায্যের জন্য আর্তচিৎকার শোনা গেছে। নিখোঁজদের খোঁজে রাতভর স্কুল প্রাঙ্গণে স্বজনরা অপেক্ষা করেছেন।
দুর্যোগ উদ্ধার সংস্থা বাসারনাস জানিয়েছে, ধসে যাওয়া ভবনটি প্যানকেক স্ট্রাকচার-এ রূপ নিয়েছে অর্থাৎ একের পর এক কংক্রিটের স্তর তৈরি হয়েছে, যেখানে জীবিত কেউ আটকা থাকতে পারেন। তবে এই স্তরগুলো অস্থিতিশীল হওয়ায় ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ।
১৩ বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রিজালুল কৈব বলেন, প্রথমে ছোট ছোট পাথরের শব্দ শুনলাম, পরে তা বাড়তে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে বাইরে চলে যাই। যদিও তার মাথায় ছাদের অংশ পড়ে আহত হন, তবুও তিনি ধ্বংসস্তূপ থেকে বের হতে সক্ষম হন।
অন্য শিক্ষার্থী সোফা বলেন, অনেকের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। চারপাশে রক্তাক্ত সহপাঠীদের দেখতে পাচ্ছি।
এক শিক্ষার্থীর মা রোসিদা জানিয়েছেন, তার ছেলে কাফা আহমাদ মৌলানা এখনও নিখোঁজ। তিনি বলেন, ঘটনার আগের দিন শেষবার ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন কিছু অস্বাভাবিক মনে হয়নি।
স্কুল পরিচর্যাকারী আব্দুস সালাম মুজিব বলেন, এটা আল্লাহর ইচ্ছা। আশা করি আল্লাহ এর চেয়ে ভালো কিছু দান করবেন। তবে স্থানীয় প্রশাসন দাবি করেছে, ভবন সম্প্রসারণের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকারি অনুমতি নেয়নি।
আল খোজিনি ইসলামিক বোর্ডিং স্কুল বা পেসান্ত্রেন একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান, যেখানে কোরআন তিলাওয়াত, আরবি ভাষা ও শরিয়া আইন শেখানো হয়। তবে সরকারি স্কুলের মতো এখানে পর্যাপ্ত নজরদারি নেই।
ইন্দোনেশিয়ার নির্মাণ খাতে নিরাপত্তার মান দীর্ঘদিন ধরে দুর্বল। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এই খাতকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খাতগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। চলতি মাসেই পশ্চিম জাভায় আরেকটি ভবন ধসে চারজন নিহত হয়।