
নির্বাচনের প্রচার ও ভোটগ্রহণের দিন ড্রোন, কোয়াডকপ্টার কিংবা এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ বিধানটি যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের অংশ হিসেবে আচরণবিধিমালার খসড়া মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে।
নতুন আচরণবিধিতে নারীদের সাইবার বুলিং প্রতিরোধ, বিদেশে কোনো প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি প্রচারণা নিষিদ্ধ, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিথ্যাচার বা অপপ্রচার চালালে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
এবার নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একজন প্রার্থী একটি আসনে সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন, যার আকার সর্বোচ্চ ১৬ ফুট হবে।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, আচরণবিধিতে যেসব প্রস্তাব ছিল তা আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, "কোড অব কন্ডাক্টের মধ্যে যেটা এড করা হয়েছিল তা আইনের ভেতরে আনা হয়েছে।" আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি হিসেবে প্রার্থীর ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান সংযোজিত হয়েছে।
সানাউল্লাহ আরও বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ও এআই ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকছে। “বোঝা মুশকিল, কোনটা এআই কোনটা নয়। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আচরণবিধি ভঙ্গের মতো কোনো কিছু করা যাবে না।”
রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের ব্যবহৃত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ও লিংকের বিস্তারিত তথ্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জমা দিতে হবে।
নতুন আচরণবিধিতে ভোটার স্লিপ বিতরণকে আইনি ভিত্তি দেওয়া হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্লিপ বিতরণ করতে পারবে, তবে তাতে প্রার্থীর নাম, ছবি, পদ ও প্রতীক উল্লেখ করা যাবে না।
বিলবোর্ড সংক্রান্ত বিধানে বলা হয়েছে, ডিজিটাল বিলবোর্ডে আলো ব্যবহার করা যাবে, তবে আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ থাকবে। আগে প্রচারে বিলবোর্ড ব্যবহারের বিধান ছিল না; এবার তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পোস্টার নিষিদ্ধের প্রস্তাব সংস্কার কমিশনও দিয়েছিল।
ব্যানার ও ফেস্টুনের ব্যবহার নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকায় এবার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের যুক্ত করা হয়েছে, ফলে তারা কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে পারবেন না।
প্রচারে পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পলিথিন বা রেক্সিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলের মধ্যে রাখতে বলা হয়েছে।
প্রচারণার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন সপ্তাহ। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আচরণবিধি মেনে চলার অঙ্গীকারনামা নেওয়া হবে।
গুরুতর আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান এবার আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে। আগে এটি আচরণবিধিতে স্পষ্ট ছিল না।
নির্বাচনকালীন গণমাধ্যম সংলাপ এবং সব প্রার্থীকে একত্রে রেখে কমন প্ল্যাটফর্মে ইশতেহার ঘোষণার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আসনের রিটার্নিং অফিসার এ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
নির্বাচনী অপরাধে প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে আরপিওর ৯১ ধারার প্রয়োগ এবার আচরণবিধিতে স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।