
রাজধানীর গুলশানে চাঁদাবাজির সময় ‘হাতেনাতে’ ধরা পড়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ পাঁচ নেতা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা একজন সাবেক সংসদ সদস্যের কাছে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে অর্থ দাবি করেছিলেন। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথম দফায় ১০ লাখ টাকা নেওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় আরও অর্থ নিতে গেলে শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় গুলশানের ৮৩ নম্বর সড়কের একটি বাসা থেকে তাদের আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনায় সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে অভিযুক্ত পাঁচ নেতাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ঘটনাটিকে ঘিরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংগঠনের সাবেক নেত্রী ফাতেমা উমামা। শনিবার (২৬ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ ঘটনায় ‘বিস্ময় প্রকাশের ভানকে হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেন। তার মতে, ঘটনার শেকড় অনেক গভীরে, আর বিস্ময় প্রকাশের ভঙ্গিমা আসলে সত্যিকারের পরিস্থিতি ঢাকার চেষ্টা।
নিজের ফেসবুক পোস্টে উমামা লেখেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত পাঁচজনের চাঁদাবাজির খবর শুনে আমার পরিচিত অনেকেই এতটাই ‘বিস্মিত’ হয়েছেন যে মনে হচ্ছে, এই ঘটনায় আমিই সবচেয়ে কম অবাক হয়েছি। এই ছেলেগুলোকে তো বহুদিন ধরে নেতাদের প্রটোকল দিতে দেখেছি—সচিবালয় থেকে শুরু করে মিছিল-মিটিং, এমনকি সংঘর্ষের ক্ষেত্রেও তারা সামনে থেকে কাজ করেছে। সমন্বয়কদের ডানহাত-বামহাত হিসেবে এদের পরিচিতি ছিল। গুলশান-বনানী গ্যাং কালচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অসংখ্য অভ্যন্তরীণ অভিযোগ আগে থেকেই ছিল এদের বিরুদ্ধে।’
উমামা ওই পোস্টে আটক হওয়া যুককদের একটি ছবি যুক্ত করে একজনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ছবিতে থাকা রিয়াদ নামের এই ছেলেটি গত ডিসেম্বরে রূপায়ন টাওয়ারে আমার সামনে চরম উশৃঙ্খল আচরণ করেছিল। আমরা কয়েকজন মেয়ে তাকে শান্ত করতে গেলে সে উল্টো আমাদের ওপর চড়াও হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, তার বিরুদ্ধে আগেও হুমকি, মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। আমি খুব একটা অবাক হইনি, কারণ তখনই বুঝে গিয়েছিলাম—বৈষম্যবিরোধী মঞ্চে এরকম মানুষের অবাধ আনাগোনা চলছে। রূপায়ন টাওয়ারে এদের প্রবেশ ছিল অবাধ, কেউ দুর্নীতি বা অসততার অভিযোগ তুললে কোনো জবাব আসত না—শুধু নিঃস্তব্ধতা। আমি নিজে দেখেছি, এসব লোক কীভাবে অবলীলায় সংগঠনের ভেতরে প্রবেশাধিকার পেয়ে যেত। এখন এতদিন পর এই প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকালে ভাষা হারিয়ে ফেলি—যে যেভাবে পেরেছে, প্ল্যাটফর্মটিকে নষ্ট করেছে।’
চাঁদাবাজির খবর প্রকাশের পর চারদিকে যে ‘বিস্ময়’ দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন উমামা। তিনি বলেন, ‘ইশ! মানুষ কতটাই না নিষ্পাপ! সদ্যজাত শিশুর মতো আজ তারা ‘আবিষ্কার’ করেছেন—এই ছেলেগুলো চাঁদাবাজি করছিল! কিন্তু দুঃখের বিষয়, এটিই প্রথম ঘটনা নয়—এই প্রথম তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে মাত্র। একটু খোঁজ নিলেই দেখা যাবে, এদের শিকড় অনেক গভীরে।’