
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বর্বর হামলায় কাতারভিত্তিক আল জাজিরার পাঁচ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার একমাত্র কণ্ঠস্বর আনাস আল-শরীফ।
ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারানোর আগের দিন তিনি আবেগঘন এক বার্তায় সবাইকে গাজাকে ভুলে না যেতে আহ্বান জানান। সোমবার (১১ আগস্ট) প্রকাশিত প্রতিবেদনে টিআরটি ওয়ার্ল্ড এই তথ্য জানিয়েছে।
টিআরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা সিটিতে সাংবাদিকদের তাঁবুতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত আল জাজিরার এই বরেণ্য সাংবাদিক মৃত্যুর পূর্বে তার শেষ ইচ্ছা ও বার্তা রেখে গেছেন। সেখানে তিনি বিশ্বের প্রতি অনুরোধ করেন, অবরুদ্ধ গাজা ও ফিলিস্তিনি জনগণকে যেন কেউ ভুলে না যায়।
রোববার নিহত আল-শরীফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ওই বার্তায় লেখেন, তিনি নিজের সব শক্তি দিয়ে কাজ করেছেন “নিজ দেশের কণ্ঠস্বর হয়ে দুঃস্থদের সাহায্যে”।
তিনি বলেন, “আমার আশা ছিল আল্লাহ আমাকে দীর্ঘজীবী করবেন, যাতে আমি আমার পরিবার ও প্রিয়জনদের নিয়ে আমাদের দখলকৃত আসকালান (আল-মাজদাল) শহরে ফিরে যেতে পারি। তবে আল্লাহর ইচ্ছাই চূড়ান্ত। জীবনযাত্রার প্রতিটি মুহূর্তে আমি বেদনা অনুভব করেছি, বহুবার কষ্ট পেয়েছি, তবু কখনো সত্যকে বিকৃত করতে রাজি হয়নি।”
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আল-শরীফের পরিবারে মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান আছেন। মৃত্যুর পর তার সন্তানদের, বিশেষত কন্যা ও ছেলের যত্ন নেওয়ার জন্য তিনি বিশেষ অনুরোধ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “তাদের পাশে থেকো, আল্লাহর পর তোমরাই তাদের ভরসা। আমি যদি শহীদ হই, তবে আমার নীতির প্রতি অটল থাকব।”
তার বার্তায় বিশ্ববাসীকে ফিলিস্তিন ও এর নিরপরাধ শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়। নীরব থাকার পরিবর্তে সক্রিয় ভূমিকা নিতে উৎসাহিত করে তিনি বলেন, “সবার উচিত ফিলিস্তিনের মুক্তির সেতুবন্ধন হওয়া।”
তিনি লিখেছেন, “আমি ফিলিস্তিন তোমাদের হাতে অর্পণ করছি—এটি মুসলিম বিশ্বের মুকুটমণি এবং বিশ্বের প্রতিটি স্বাধীন মানুষের হৃদস্পন্দন। আমি এর জনগণকে, বিশেষ করে নিরপরাধ শিশুদের তোমাদের হাতে তুলে দিচ্ছি, যারা কখনো স্বপ্ন দেখার বা নিরাপদে বাঁচার সুযোগ পায়নি।”
আল-শরীফ আরো বলেছেন, “শিকল যেন তোমাদের নীরব না করে, সীমান্ত যেন আটকে না রাখে। ভূমি ও মানুষের মুক্তির সেতু হও যতক্ষণ না আমাদের চুরি হওয়া মাতৃভূমিতে মর্যাদা ও স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়।”
শেষে তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, যেন তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করা হয় এবং তার গুনাহ ক্ষমা করা হয়। বার্তার সমাপ্তিতে তিনি লিখেছেন, “গাজাকে ভুলে যেও না... আর তোমাদের আন্তরিক দোয়ার মাঝে আমাকে ভুলে যেও না।”