
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেশের ক্যাম্পাসে সংঘটিত সশস্ত্র উত্তেজনার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তর থেকে রামদা, দা, রড, ছুরি ও অন্যান্য দেশি অস্ত্র লুট হওয়ায় প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব অস্ত্র ফিরিয়ে না দিলে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় এসব অস্ত্র শিক্ষার্থীরা লুট করে নিয়েছিল। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের সংখ্যা মোট ১৩০টি। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন আবাসিক হলে অভিযান চালিয়ে কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “জোবরা গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে ব্যবহৃত এসব অস্ত্র যাদের কাছে রয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিরাপত্তা দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। অন্যথায় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ধরেননি। পরে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান জানান, “ছাত্রলীগ আমলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে দেশি অস্ত্র ও রড জব্দ করেছিলাম। রোববার দুপুরে ক্ষুব্ধ ছাত্ররা নিরাপত্তা দপ্তরের ছয়টি তালা ভেঙে ১৩০টি দেশি অস্ত্র ও রড নিয়ে যায়। নিরাপত্তাকর্মীরা ভিডিও করার চেষ্টা করলেও তাদের ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করছি। শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করছি, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অস্ত্রগুলো ফিরিয়ে দিতে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দুই ঘণ্টার মধ্যে পাঁচটি দা ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে।”
গত শনিবার দিবাগত রাত ১২:৩০ থেকে রোববার বেলা ৩টা পর্যন্ত জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটে। এতে দুই পক্ষের কমপক্ষে ২২০ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী। রোববার দুপুর ২টা থেকে ২ নম্বর গেট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়, যা এখনও কার্যকর রয়েছে।
সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় একটি বাসার দারোয়ান এক ছাত্রীকে মারধর করার খবরে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও রড-লাঠি ব্যবহার শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল রড, পাইপ, লাঠি ও পাথর; গ্রামবাসীর হাতে ছিল রামদা, রড ও পাইপ। সংঘর্ষে পুরো জোবরা গ্রাম রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং গ্রামের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী সেখানে আটকা পড়লে মারধরের শিকার হন। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়।