
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে জনমনে অনিশ্চয়তা ও সন্দেহ তৈরি হওয়ায় গণতন্ত্রের উত্তরণের পথ সংকটাপন্ন হয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি অভিযোগ করেন, “প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্যনতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে কেমন যেন সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে।”
রোববার (২ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “কৌশল ও অপকৌশলের মধ্যে আমরা পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ হলে কোনো অগণতান্ত্রিক কিংবা অপশক্তির কাছে শেষ পর্যন্ত বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের পথে হাঁটতে হয় কি না, বাংলাদেশের এই মুহূর্তে মাঠে থাকা সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে এমন বিপদের কথাও স্মরণ রাখার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাই।”
তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসনামলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর জনমনে প্রশ্ন উঠছে— যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে? অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে অতীতে স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয়, আজ ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল চোখে পড়ছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান আহ্বান জানান, “প্রতি আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী আছেন, কিন্তু সবাই শেষ পর্যন্ত শহীদ জিয়ার অনুসারী, খালেদা জিয়ার সৈনিক। মনে রাখবেন, ধানের শীষ জিতলে আপনি জিতেছেন— বিজয়ী হবে দেশ ও গণতন্ত্র।”
তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেন, “আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে। নিজেদের মধ্যে রেষারেষি এমন পর্যায়ে নেওয়া উচিত নয়, যাতে প্রতিপক্ষ সুযোগ নিতে পারে।”
৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে জানিয়ে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে তফসিল ঘোষণা করবে। বিএনপি নির্বাচনের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে এবং প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”
শরিকদের নিয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারা রাজপথে আমাদের সঙ্গে ছিলেন, এমন প্রার্থীদেরও বিএনপি সমর্থন দেবে। এতে কিছু আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন নাও পেতে পারেন, তবে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। স্বাধীনতার ঘোষকের সেই কথা মনে রাখবেন— ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।’”
তিনি আরও বলেন, “একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি গণতান্ত্রিক ঐক্য রক্ষায় সবসময় সহযোগিতার মনোভাব দেখিয়েছে। তবু প্রতিনিয়ত নতুন শর্ত আরোপ করে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে জটিল করে তোলা হচ্ছে। এর পরিণতি সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।”