
আজকের সামাজিক পরিবেশে অনেক সময় মজার ছলে বা বন্ধুমহলে ঠাট্টা-বিদ্রূপের অংশ হিসেবে কেউ কেউ ‘বিয়ে’ করার প্রস্তাব দেন। এমনকি দুষ্টুমির ছলে ‘কবুল’ বলে ফেলার ঘটনা ঘটতে পারে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, ইসলামিক শরিয়তের দৃষ্টিতে এই বিয়ে কি বৈধ হবে? আসলে, বিয়ের ক্ষেত্রে শরিয়তে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। যদি এই শর্তগুলো পূরণ হয়, তবে এমন মজার ছলেও বিয়ে বৈধ বলে গণ্য হতে পারে।
তিরমিজি শরীফে বর্ণিত এক হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি বিষয় এমন রয়েছে যা সিরিয়াসভাবেই করা হোক বা ঠাট্টা করেও করা হোক, তা কার্যকর হয়। সেগুলো হলো বিয়ে (নিকাহ), তালাক এবং তালাকের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া। (রাজয়ী তালাক) (জামে তিরমিজি, হাদিস: ১১৮৪)
এই হাদিস থেকে জানা যায়, বিয়ে ঠাট্টা ছলেও কার্যকর হতে পারে, যদি বিয়ের শর্তগুলো পূরণ হয়।
ইসলামী ফিকাহ অনুসারে বিয়ের বৈধতার জন্য প্রয়োজন হয় পাত্র ও পাত্রীর পূর্ণ সম্মতি, স্পষ্ট ইজাব-কবুল অর্থাৎ বিয়ের প্রস্তাব ও গ্রহণের শব্দবিন্যাস, এবং কমপক্ষে দুইজন মুসলিম সাক্ষীর উপস্থিতি। যদি এগুলো পূরণ হয়, তাহলে শরিয়তের দৃষ্টিতে বিয়ে বৈধ হবে, এমনকি তা যদি দুষ্টুমির ছলে হয়ে থাকে তবুও। তাই এই ধরনের পরিস্থিতিতে যদি কেউ ‘কবুল’ বলে ফেলে এবং অন্যান্য শর্ত পূরণ হয়, তাহলে তাদের বিয়ে হয়ে গেছে বলে বিবেচনা করতে হবে।
অর্থাৎ, ওই মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিতে চাইলে প্রথমে বর্তমান বিয়ে থেকে তালাক নিতে হবে। অন্যথায় পুনরায় বিয়ে করা ইসলামিক দৃষ্টিতে সঠিক হবে না । তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যদি তারা একসঙ্গে নির্জনবাস না করে থাকেন, তাহলে বিয়ের পর ইদ্দত রাখার প্রয়োজন হবে না। তালাকের পরপরই মেয়েটি অন্যত্র বিয়ে করতে পারবেন।
বিয়ে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের ভিত্তি। তাই বিয়ের ব্যাপারে কখনই ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা অবহেলা করা উচিত নয়। পাশাপাশি বেগানা পুরুষ ও নারীদের অযথা দেখা-সাক্ষাৎ বা আলাপচারিতার বিষয়টিও ইসলামিক বিধান অনুসারে নিষিদ্ধ এবং তা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
এ বিষয়ে ইসলামী শরিয়া ও ফিকাহ বইগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো: ফাতহুল কাদীর (৩/১১০), ফাতাওয়া খানিয়া (১/৩২৭), রদ্দুল মুহতার (৩/১১), ফাতাওয়া তাতারখানিয়া (৪/১৩) এবং মাজমাউল আনহুর (১/৪৬৯)।
সুতরাং, দুষ্টুমির ছলে ‘কবুল’ বলে ফেলার বিষয়টি কখনো হালকাভাবে নেওয়ার নয়। এতে অনিচ্ছাকৃতভাবেই ইসলামিকভাবে একটি বৈধ বিবাহ সম্পন্ন হতে পারে, যা পরবর্তীতে অনেক সামাজিক ও আইনি জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই বিয়ের ক্ষেত্রে সর্বদা সতর্কতা ও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।