
কোরআনুল কারিমের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৭-৫৮
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে
قُلۡ اِنِّیۡ عَلٰی بَیِّنَۃٍ مِّنۡ رَّبِّیۡ وَ كَذَّبۡتُمۡ بِهٖ ؕ مَا عِنۡدِیۡ مَا تَسۡتَعۡجِلُوۡنَ بِهٖ ؕ اِنِ الۡحُكۡمُ اِلَّا لِلّٰهِ ؕ یَقُصُّ الۡحَقَّ وَ هُوَ خَیۡرُ الۡفٰصِلِیۡنَ ﴿۵۷﴾
قُلۡ لَّوۡ اَنَّ عِنۡدِیۡ مَا تَسۡتَعۡجِلُوۡنَ بِهٖ لَقُضِیَ الۡاَمۡرُ بَیۡنِیۡ وَ بَیۡنَكُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ اَعۡلَمُ بِالظّٰلِمِیۡنَ ﴿۵۸﴾
সরল অনুবাদ
(৫৭) বলুন, নিশ্চয় আমি আমার রব-এর পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত; অথচ তোমরা এতে মিথ্যারোপ করেছ। তোমরা যা খুব তাড়াতাড়ি পেতে চাও তা আমার কাছে নেই। হুকুম কেবল আল্লাহর কাছেই, তিনি সত্য বর্ণনা করেন এবং ফয়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ।
(৫৮) বলুন, তোমরা যা খুব তাড়াতাড়ি পেতে চাও তা যদি আমার কাছে থাকত, তবে আমার ও তোমাদের মধ্যে তো ফয়সালা হয়েই যেত।
আর আল্লাহ যালিমদের ব্যাপারে অধিক অবগত।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সুরা আনআমের ৫৭ নম্বর আয়াতটিতে “স্পষ্ট প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত” দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, সেই শরীয়ত যা অহীর মাধ্যমে মহানবী (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। যাতে তাওহীদকেই মূল ও প্রথম স্থান দান করা হয়েছে।
অতপর “তোমরা যা খুব তাড়াতাড়ি পেতে চাও তা আমার কাছে নেই।
হুকুম কেবল আল্লাহর কাছেই, তিনি সত্য বর্ণনা করেন” এখোনে বলা হচ্ছে যে, সারা বিশ্বজাহানে আল্লাহরই নির্দেশ চলে এবং সমস্ত ব্যাপার তাঁরই হাতে। এই জন্য তোমরা যে চাও, সত্বর আল্লাহর আজাব তোমাদের ওপর আসুক, যাতে তোমরা আমার সত্য অথবা মিথ্যা হওয়ার ব্যাপারটা জানতে পার, এটাও তো আল্লাহর এখতিয়ারাধীন। তিনি চাইলে সত্বর শাস্তি প্রেরণ করে তোমাদেরকে সতর্ক কিংবা ধ্বংস করে দেবেন এবং তিনি চাইলে সেই পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দেবেন, যে পর্যন্ত অবকাশ দেওয়া তাঁর হিকমতের দাবি হবে।
আয়াতের শেষাংশে يَقُصُّ শব্দের উৎপত্তি হলো قَصَصٌ থেকে।
অর্থাৎ, يَقُصُّ قَصَصَ الْحَقِّ (সত্য কথা বর্ণনা করেন অথবা বলেন)। কিংবা قَصَّ أَثَرَهُ (কারো পিছনে অনুসরণ করা) থেকে। অর্থাৎ, يَتَّبِعُ الْحَقَّ فِيْمَا يَحْكُمُ بِهِ (নিজের ফায়সালার ব্যাপারে তিনি সত্যের অনুসরণ করেন। অর্থাৎ, সত্য ফায়সালা করেন)। (ফাতহুল ক্বাদির)
সুরার ৫৮ নং আয়াতে বলা হচ্ছে যে, আমার চাওয়ার কারণে যদি আল্লাহ তাআলা সত্বর আজাব প্রেরণ করতেন অথবা তিনি যদি এ জিনিসকে আমার এখতিয়ারাধীন করে দিতেন, তাহলে তোমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী আজাব প্রেরণ করে সত্বর ফায়সালা করে দেওয়া হত।
কিন্তু এ ব্যাপারটা যেহেতু সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল, তাই তিনি না আমাকে এর এখতিয়ার দিয়েছেন, আর না এটা সম্ভব যে, তিনি আমার চাওয়া অনুযায়ী সত্বর আজাব প্রেরণ করবেন।
কাজেই দুনিয়ার জীবনে অনেককে নানাবিধ পাপাচারে লিপ্ত থেকেও সুখ ও সমৃদ্ধির জীবন ভোগ করতে দেখে অবাক হওয়ার কিছূ নেই। বরং এমনটিই আল্লাহর ইচ্ছে। তিনি তাকে অবকাশ দিয়ে রেখেছেন। কোনো এক সময় শক্তভাবে পাকড়াও করবেন। বরং যে সামান্য পাপ করলেও বিপদের সম্মুখিন হয় আর সুপথে ফিরে আসার অবস্থা সৃষ্টি হয়; বলা যায় আল্লাহ তাকে করুণা করেছেন।
একটি জরুরি বিশ্লেষণ: হাদিসে আছে যে, তায়েফবাসীর নিকটে নিপীড়িত হওয়ার পর পাহাড়ের ফিরিশতা আল্লাহর নির্দেশে নবী করীম (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন যে, আপনি নির্দেশ দিলে আমি সমস্ত জনপদকে উভয় পাহাড়ের মধ্যস্থলে পিষে দেব। তিনি (সা.) বললেন, না। বরং আমি আশা করি আল্লাহ তাআলা এদেরই বংশ থেকে আল্লাহর ইবাদতকারী সৃষ্টি করবেন; যারা তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না।’’ (বুখারি, সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়, মুসলিম, জিহাদ অধ্যায়) এই হাদিস উল্লিখিত আয়াত ও তার ব্যাখ্যার প্রতিকূল নয়, যদিও বাহ্যতঃ তাই মনে হয়। কারণ, আয়াতে আজাব চাওয়া হলে আজাব দেওয়ার কথা প্রকাশ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে হাদিসে মুশরিকদের চাওয়া ছাড়াই কেবল তাদের কষ্ট দেওয়ার ফলে তাদের ওপর আজাব প্রেরণ করার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করা হয়েছে; যা তিনি (সা.) পছন্দ করেননি।