
নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে নতুন অধ্যায়—ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জোহরান মামদানি ভোটের মাধ্যমে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। ফল ঘোষণার পর নিজের জয়ের পথে সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে যাকে তিনি চিহ্নিত করেছেন—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প—তাকেই সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানান মামদানি।
ভোটের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পরে একটি মিলনায়তনে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া বিজয় ভাষণে মামদানি বলেন, “আজ নিউইয়র্ক সিটি দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে হয়। কেউ যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে চান, তিনি এই শহরকে দেখতে পারেন।”
তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, “তো ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি আমাকে দেখছেন। আমার কিছু কথা আছে আপনার জন্য; দয়া করে ভলিউম বাড়িয়ে নিন।”
বিজয়ী মন্তব্যে মামদানি নতুন প্রজন্মের বদল চাওয়ার ইঙ্গিত দেন এবং বলেন, তারা অভিজাততন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে—কোনো তুষ্টি-তোষণ বা তোষামোদের রাজনীতি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “নিউইয়র্কের নতুন প্রজন্ম পরিবর্তন চায়। আর এই পরিবর্তনের জন্য তারা আমাকে তাদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছে। আমরা অভিজাততন্ত্র এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে সেই শক্তি দিয়েই সাড়া দেবো, যাতে তারা ভয় পায়। আমারা কোনোপ্রকার তুষ্টি, তোষণ বা তোষামোদের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই।”
বিজয় ভাষণের এক অংশে তিনি নাম না করে ট্রাম্পকে ‘স্বৈরশাসক’ও আখ্যা দেন এবং বলেন, “কোনো স্বৈরশাসককে যদি ভয় দেখাতে হয়, তাহলে সর্বোত্তম উপায় হলো যেসব শর্ত ওই স্বৈরশাসককে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সহায়তা করছে, সেগুলো অকার্যকর করে দেওয়া। যদি আমরা এমনটা করতে পারি, তাহলে শুধু ট্রাম্প নয়— তার পরবর্তীতে যদি কোনো স্বৈরশাসক আসে, তাকেও আমরা থামিয়ে দিতে পারব।”
মামদানি নিউইয়র্কবাসীর উদ্দেশ্যে আরেকবার ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “নিউইয়র্কের বাসিন্দারা, আজ আপনারা পরিবর্তনকে ম্যান্ডেট দিয়েছেন, নতুন রাজনীতিকে ম্যান্ডেট দিয়েছেন। আমরা নিউইয়র্ক শহরকে যেমন দেখতে চাই, তেমন একটি শহর গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিকে ম্যান্ডেট দিয়েছেন।”
অভিবাসী-সংখ্যাবহুল নিউইয়র্কে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছিল; তবুও এই নির্বাচন বিতর্কেরও। এবারে মেয়র পদের জন্য মোট তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন—ডেমোক্র্যাট জোহরান মামদানি, রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমো। মামদানিই প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন; কুওমো পান ৪২ শতাংশ, আর কার্টিস স্লিওয়া পান ৮ শতাংশ ভোট।
রিপাবলিকান শিবির, বিশেষত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, শুরু থেকেই মামদানির বিরুদ্ধে ছিলেন। ট্রাম্প কুওমোকে সমর্থন দিয়েছেন এবং তথ্যে উঠে এসেছে রিপাবলিকান পার্টি মামদানির বিরুদ্ধে প্রচারণায় আড়াই কোটি ডলার ব্যয় করেছে। এছাড়া ট্রাম্প হুঁকি উত্থাপন করেছেন—মামদানি জয়ী হলে নিউইয়র্ককে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছেন।
ভোটের ফল ঘোষণার পরে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশ না করে) বলেছেন, ট্রাম্পের কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দ বন্ধের হুমকিকে “হালকাভাবে” নেওয়া উচিত না—নিউইয়র্ক সিটির প্রশাসনকে এ হুমকিকে তৎপরতার সঙ্গে দেখতে হবে।