
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য এক আত্মঘাতী পদক্ষেপ বলে কড়া সমালোচনা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তার মতে, এই স্বীকৃতি ইসরায়েলের অস্তিত্বের ওপর সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি এই পদক্ষেপকে ইসরায়েলের "গলায় ছুরি ধরার" মতো ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন।
শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, “ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে আপনারা আসলে ইহুদি হত্যাকে সমর্থন করেছেন। একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আমাদের গলায় ছুরি ধরে থাকবে; তা আমরা কখনও মেনে নেবো না।”
তবে তার বক্তব্য শুরু হওয়ার পরপরই সাধারণ পরিষদের মিলনায়তন অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের বড় একটি অংশ বিক্ষোভ স্বরূপ হল ছেড়ে চলে যান। তবুও উত্তেজিত কণ্ঠে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন নেতানিয়াহু।
ইউরোপীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “নিষ্ঠুর মিডিয়া এবং ইহুদিবিরোধী মবের মুখোমুখি হওয়ার সাহস আপনাদের নেই। তাই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে আপনারা হামাসকে পুরস্কৃত করছেন, আর ইসরায়েলকে আত্মহত্যার পথে ঠেলছেন। কিন্তু আমরা এটা কখনও মানব না।”
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গত সোমবার একটি বৈশ্বিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, যেখানে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে মত দেয় একাধিক দেশ। ফ্রান্স ও সৌদি আরবের উদ্যোগে আয়োজিত এই সম্মেলনে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য ও লুক্সেমবার্গসহ বেশ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়।
সম্মেলনে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব নিরসনে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বাস্তবায়নের আহ্বান ওঠে। পাশাপাশি পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অব্যাহত দখলদারির অবসান ঘটানোর দাবিও তীব্র হয়।
তবে জাতিসংঘে দেওয়া বক্তব্যে নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি দখলনীতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। বরং তিনি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট এবং পশ্চিম তীরে শাসনকারী সরকারকে “আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত” বলে অভিহিত করেন।
উল্লেখ্য, নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের বিরোধিতা করে আসছেন। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক অভিযান থামাতে আন্তর্জাতিক মহলের টানা দুই বছরের চাপ সত্ত্বেও তিনি সেই অভিযান বন্ধের কোনো নির্দেশ দেননি।
নেতানিয়াহুর ভাষণের জবাবে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আদেল আতিয়েহ বলেন, “জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর এই ভাষণ আসলে একজন পরাজিত মানুষের জবানবন্দি।”