
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমদ বলেছেন, বিচারবিভাগ নিজস্ব গতিতে এগিয়ে চলেছে এবং গত এক বছরে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি জুডিশিয়াল পদায়ন ও গঠন বিধিমালায় প্রথমবারের মতো বিচার বিভাগকে বড় পরিসরে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে সিলেটের একটি হোটেলে খসড়া বাণিজ্যিক আদালত গঠনের বিষয়ে আয়োজিত একটি সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি জানান, দেশে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে। তিনি বলেন, “বিভিন্ন ডেভেলপমেন্ট পার্টনার টিমের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ চলছে। জুলাই মাসে বিডা, ইউএনডিপি ও ইইউ মিলে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে একটি ডায়লগে আইনজীবী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি পাওয়া গেছে। এ বিষয়গুলোকে এজেন্ডা ধরে কাজ করা হচ্ছে। ফাইনাল ড্রাফট সরকারকে দেয়া হবে। কারণ বাস্তবায়ন করবে সরকার।”
তিনি আরও বলেন, দেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এখনো আলাদা কোনো বিচারিক ফোরাম নেই। কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক মামলা সাধারণ দেওয়ানি মামলার মতোই বিচারাধীন থাকায় দ্রুত ও কার্যকর নিষ্পত্তি হচ্ছে না। তিনি বলেন, “এটি বিচারকদের নয়, কাঠামোগত অসংগতি।” ফলে মামলার জট বাড়ছে, ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে শুধু অর্থ ঋণ আদালতেই ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার মামলা অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত গঠনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটি কারো একক দাবি নয়। বড় বিনিয়োগকারী থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি সবাই দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ফোরামে এই দাবি জানিয়ে আসছেন।”
রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের উদাহরণ দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, এসব দেশে বাণিজ্যিক আদালতের মাধ্যমে দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্যও দিকনির্দেশক হতে পারে।
প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালতের সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ।
তিনি জানান, আদালত চালুর পর বিচারকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং মিশ্র আইন ব্যবস্থার সুফল কাজে লাগানো হবে। বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, “এটি কেবল নতুন আদালত নয়, বরং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের জন্য একটি নতুন ভিত্তি।”
সেমিনারের মূল পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমদ। সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপি আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ।
সেমিনারে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কর্মকর্তারা, আইনজীবী এবং সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।