
বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জন ব্যক্তি ও ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে জড়িত করে ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ধরা পড়েছে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা (৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিদেশে পাচারের অভিযোগ।
রোববার (৯ নভেম্বর) বিকেলে মালিবাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ছিগবাত উল্লাহ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের তদন্তে প্রমাণ মিলেছে যে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ১৭টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বিপুল অর্থ বিদেশে পাঠিয়েছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অ্যাডভান্স গার্মেন্টস, অ্যাপোলো এপারেলস, অটোম্যান লুপ অ্যাপারেলস, বিক্সটেক্স গার্মেন্টস, কসমোপলিটান অ্যাপারেলস, কজি অ্যাপারেলস, ইসেস ফ্যাশন ইন্টারন্যাশনাল, কাঁচপুর অ্যাপারেলস, মিড ওয়েস্ট গার্মেন্টস, পিয়ারলেস গার্মেন্টস, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস, প্লাটিউর গার্মেন্টস, স্কাইনেট অ্যাপারেলস, স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস, আরবান ফ্যাশন ও উইন্ট্রা ইস্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেড।
এসব প্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে এলসি খোলার মাধ্যমে রপ্তানি দেখালেও বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ফেরত আনা হয়নি। বরং ওই অর্থ দুবাইভিত্তিক আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেডের মাধ্যমে আমিরাত, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। এই কোম্পানির মালিকানা রয়েছে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং চেয়ারম্যান এএসএফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে।
সিআইডির তদন্তে জানা যায়, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানগুলো ৯৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮০ মার্কিন ডলার রপ্তানি দেখিয়েছে, কিন্তু বিপরীতে কোনো অর্থ দেশে ফেরত আসে নি। ২০২৪ সালের ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানায় ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তী তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন সম্প্রতি দেওয়া হয়েছে।
অতীতে আদালতের নির্দেশে আসামিদের ঢাকার দোহার উপজেলার প্রায় ২ হাজার শতক জমি ও স্থাপনা, গুলশানের দ্য এনভয় বিল্ডিংয়ের ৬ হাজার ১৮৯.৫৪ বর্গফুট ফ্ল্যাট এবং গুলশান ৬৮/এ, রোড ৩১-এর ২ হাজার ৭১৩ বর্গফুট ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট ক্রোক করা হয়েছে। এছাড়া তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ এবং বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ক্রোককৃত সম্পত্তির বাজারমূল্য আনুমানিক ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা।
মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সালমান এফ রহমানকে। এর আগে জানুয়ারি মাসে অটোম্যান লুপ অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিউর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট জানিয়েছে, “ট্রেড-বেইজড মানিলন্ডারিংয়ের এই জটিল তদন্ত দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে রাষ্ট্রের আর্থিক স্বার্থ রক্ষায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি।”