
আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং ধারাবাহিক আফটারশকের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮০০ জন মানুষ। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এখন চলছে ব্যাপক উদ্ধার অভিযান।
রোববার (৩১ আগস্ট) মধ্যরাতের কিছু আগে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। কাবুল থেকে শুরু করে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ পর্যন্ত ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, প্রায় ১২ লাখ মানুষ তীব্র কম্পনে কেঁপে ওঠেন। নাঙ্গারহার প্রদেশের জালালাবাদ শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানান, শুধু কুনার প্রদেশেই অন্তত ৮০০ জন নিহত এবং ২ হাজার ৫০০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী নাঙ্গারহার প্রদেশে আরও ১২ জন নিহত এবং ২৫৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল মতিন কানি এএফপিকে বলেন, অসংখ্য বাড়িঘর ধসে পড়েছে। আফগানিস্তানে অধিকাংশ মানুষ কাঁচামাটির তৈরি নিচু ঘরে বসবাস করায় এসব এলাকায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, দুর্গম কুনার প্রদেশের কিছু গ্রামে রাস্তাঘাট বন্ধ থাকায় এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এদিকে তালেবান প্রশাসন ও জাতিসংঘ যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৪০টি বিমান ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে।
কুনারের নুরগাল জেলার কৃষি বিভাগের সদস্য ইজাজ উলহাক ইয়াদ বলেন, প্রচণ্ড ভয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে… নারী-শিশুরা চিৎকার করছিল। জীবনে এমন কিছু আমরা আগে কখনও অনুভব করিনি। তিনি আরও জানান, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই ইরান ও পাকিস্তান থেকে ফিরে আসা আফগান পরিবার।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আফগান জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, আজ ভোরে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর আমি আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি।
প্রাথমিক ভূমিকম্পের পর সারা রাত ধরে অন্তত পাঁচটি আফটারশক আঘাত হানে। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালীটি ছিল ভোর ৪টার কিছু পর, যার মাত্রা ছিল ৫.২।
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত আফগানিস্তান সম্প্রতি বন্যারও শিকার হয়েছে। প্রাদেশিক প্রশাসন জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত নাঙ্গারহার প্রদেশে বন্যায় পাঁচ জন নিহত হন এবং ব্যাপক ফসল ও সম্পদহানি ঘটে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে পশ্চিম হেরাত প্রদেশে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন প্রাণ হারান এবং ৬৩ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়।