
সাত বছর পর চীন সফরে গিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের অঙ্গীকার করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার (৩১ আগস্ট) শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে মোদি বলেন, নয়াদিল্লি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী। ওই বৈঠকে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হয়।
এসসিও-র এই দুই দিনের সম্মেলনে মোদি ছাড়াও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতারা অংশ নিচ্ছেন।
মোদির সরকারি এক্স অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি শি জিনপিংকে বলছেন, “আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা ও সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি এমন সময়ে হলো, যখন রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার জেরে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা চাপ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ বার্তা দিতে চান মোদি ও শি।
মোদি বৈঠকে জানান, ২০২০ সালের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর হিমালয় সীমান্তে উত্তেজনা কমে এসেছে এবং এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। তিনি বলেন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো হয়েছে, তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
রয়টার্স জানায়, গত বছর রাশিয়ায় এক বৈঠকে সীমান্ত টহল নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। এরপর থেকে সম্পর্ক উন্নয়নের গতি বাড়ে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই ধারা আরও জোরালো হয়েছে, বিশেষ করে ওয়াশিংটনের নতুন শুল্ক আরোপের হুমকির মুখে বিকল্প কূটনৈতিক অবস্থান খুঁজছে নয়াদিল্লি।
মোদি বলেন, “২০২০ সালের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া ভারত-চীন সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে,” তবে তিনি কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করেননি।
চলতি মাসের শুরুতে ভারত সফরে এসে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বিরল খনিজ, সার ও টানেল বোরিং যন্ত্রের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার ঘোষণা দেন। একই সময়ে দিল্লিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত শু ফেইহং বলেন, “চীন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের বিরোধিতা করে এবং ভারতের পাশে দৃঢ়ভাবে থাকবে।”
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই ভারতকে একটি আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ হিসেবে চীনের ভারসাম্য রক্ষাকারী শক্তি হিসেবে দেখছে।
সম্প্রতি চীন ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের তিব্বতের বৌদ্ধ তীর্থস্থানে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। একই সঙ্গে দুই দেশ একে অপরের ওপর জারি থাকা পর্যটক ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।
তাকশশিলা ইনস্টিটিউটের চীন-ভারত সম্পর্ক বিশ্লেষক মনোজ কেওয়ালরামানি বলেন, “ভারত ও চীন এমন এক প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছে, যা দীর্ঘ ও জটিল হবে। এর মাধ্যমে তারা সম্পর্কের একটি নতুন ভারসাম্য খুঁজে বের করতে চাইছে।”