
ক্ষমতায় আসার আগে গরুর মাংস রপ্তানি নিয়ে কড়া সমালোচনা করলেও, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলেই ভারতের গো-মাংস শিল্প অভাবনীয়ভাবে প্রসার লাভ করেছে। বর্তমানে ভারত ৬৫টি দেশে গরুর মাংস রপ্তানি করছে এবং বছরে এ খাত থেকে আয় করছে প্রায় ৪৩ কোটি ডলার।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) মুসলিম মিরর-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গরুর মাংস রপ্তানিকারক দেশ এখন ভারত। তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে ব্রাজিল, এরপর ভারত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
ক্ষমতায় আসার আগে মোদি কংগ্রেস সরকারের ‘পিঙ্ক রেভলিউশন’ নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন যে, “মনমোহন সিংয়ের সরকার ভারতের বেড়ে চলা গরুর মাংস রপ্তানি ইচ্ছাকৃতভাবে উৎসাহিত করেছে, যাতে ১৪ শতাংশ মুসলিম ভোটারকে খুশি রাখা যায়।”
তবে বাস্তবে ভারতে গো-মাংস শিল্প থামানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরু জবাই সংক্রান্ত কোনো কেন্দ্রীয় আইন না থাকায়, বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্যমান শিথিল আইন ও ফাঁকফোকর ব্যবহার করে এই শিল্প চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে। গরু পাচারও এমন রাজ্যগুলোতে চালানো হচ্ছে, যেখানে এই কাজের শাস্তি কম বা নেই।
ভারতের গো-মাংস রপ্তানি শুরু হয় ১৯৬০-এর দশকে। তবে মোদির শাসনামলে গত এক দশকে এই রপ্তানি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ভারতের মাংসের চাহিদা রয়েছে, কারণ এটি মূলত প্রাকৃতিকভাবে চারণভূমিতে লালিত গরু ও মহিষের মাংস।
তবে গরু বনাম মহিষের মাংস নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বলা হয়, ভারতের রপ্তানিকৃত মাংসের বড় অংশই মহিষের। দেশে প্রায় ১১ কোটি ৫০ লাখ মহিষ রয়েছে, যা বিশ্বের মোট মহিষের অর্ধেকেরও বেশি। প্রতিবছর ভারত প্রায় ১৫ লাখ ৩০ হাজার টন গরুর মাংস উৎপাদন করে।
গরুর মাংস রপ্তানির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলা হচ্ছে, ভারতে ৭ কোটি ৬০ লাখ গরু রয়েছে এবং দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুধ উৎপাদনকারী দেশ। বয়সের কারণে অনেক গরু আর দুধ দিতে না পারলে, তাদের চামড়া ও মাংস রপ্তানির কাজে ব্যবহার করা হয়।
যদিও অনেক হিন্দু গরুর মাংস রপ্তানিকে অস্বীকার করেন, তবে শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাভজনক এই খাতে গরুর মাংসও ভূমিকা রাখছে। উপসাগরীয় দেশগুলোতে বিশাল বাজার থাকার কারণে হিন্দু ব্যবসায়ীরাও এই শিল্পে যুক্ত হচ্ছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারতের শীর্ষ ছয় মাংস রপ্তানিকারকের মধ্যে চারজনই হিন্দু উদ্যোক্তা।