
সহিংস বিক্ষোভ ও পাল্টা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, তারা কখনোই দেশের পতাকা সমর্পণ করবেন না। তার ভাষায়, ব্রিটিশ পতাকা জাতির বহুজাতিক ও বৈচিত্র্যময় পরিচয়ের প্রতীক; একে কোনোভাবেই ঘৃণা বা সহিংসতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, সম্প্রতি লন্ডনে এক ডানপন্থি জমায়েত ও পাল্টা বিক্ষোভের পর এই কঠোর বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার।
তিনি বলেন, “এই পতাকা দেশের বৈচিত্র্যের প্রতীক, তাই মানুষের বর্ণ বা পরিচয়ের কারণে রাস্তায় ভয় পাওয়ার মতো পরিস্থিতি সহ্য করা হবে না।”
প্রসঙ্গত, শনিবার লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে অনুষ্ঠিত “ইউনাইট দ্য কিংডম” নামক এক বিশাল মিছিলে অংশ নেয় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ডানপন্থি কর্মী। এই কর্মসূচির আয়োজক ছিলেন বিতর্কিত রাজনৈতিক কর্মী টমি রবিনসন। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় “স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম” ব্যানারে প্রায় ৫ হাজার মানুষ সন্ত্রাস ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেয়।
এই দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান ও সংঘাতের জেরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার অবস্থান স্পষ্ট করেন।
“মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকার রাখে। এটা আমাদের জাতীয় মূল্যবোধের অংশ। কিন্তু দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা কিংবা মানুষকে তাদের বর্ণ বা পরিচয়ের কারণে আতঙ্কিত করা মেনে নেওয়া হবে না। যুক্তরাজ্য সহনশীলতা, বৈচিত্র্য ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের পতাকা এই বৈচিত্র্যের প্রতীক, একে কখনোই সহিংসতা, ভয় বা বিভেদের প্রতীক বানাতে দেওয়া হবে না,” বলেন স্টারমার।
লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, শনিবারের ওই ঘটনার সময় মোট ২৬ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সেদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় হাজারো মানুষকে দেখা যায় ইউনিয়ন জ্যাক ও ইংল্যান্ডের সেন্ট জর্জের পতাকা হাতে মিছিল করতে। পাশাপাশি কিছু স্কটিশ সাল্টায়ার ও ওয়েলসের পতাকাও দেখা যায় জনতার মাঝে।
এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ব্রিটিশ ব্যবসা মন্ত্রী পিটার কাইল বলেন, “এই মিছিল আসলে মত প্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ।” তবে তিনি সতর্ক করেন, সমাজে তৈরি হওয়া বিভাজন রাজনৈতিক নেতাদের জন্য একটি জাগরণের বার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রোববার বিবিসির এক টক শো-তে কাইল বলেন, “সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো আমাদের সমাজে যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে, সেটা আর কেবল বাম-ডান রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।” তিনি আরও বলেন, সমাজে টমি রবিনসনের মতো কিছু ব্যক্তি অসন্তোষ ও ক্ষোভকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সহিংসতায় জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
এই প্রেক্ষাপটে আলোচনায় উঠে আসে মার্কিন প্রযুক্তি টাইকুন ইলন মাস্কের একটি বক্তব্য। ভিডিও লিঙ্কে যুক্ত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “প্রতিরোধ করো, নইলে মরে যাও।” তিনি “অসংযত অভিবাসন” বিষয়ে সতর্ক করে যুক্তরাজ্যে সরকার পরিবর্তনের আহ্বান জানান।
তবে মাস্কের এই মন্তব্যকে “সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত” বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী পিটার কাইল।