
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরু থেকেই বাংলাদেশের রপ্তানি ক্রমাগত পতনের মুখোমুখি হচ্ছে। অক্টোবর মাসে এই ধারা অব্যাহত থাকায় রপ্তানি ৩৬২ কোটি ডলারে নামেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাত শতাংশ কম। গত বছরের অক্টোবরে রপ্তানি ছিল ৪১৩ কোটি ডলার। এর ফলে রপ্তানি তিন মাস ধরে ধীরগতিতে চলেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিব) জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাসে রপ্তানি ৩ শতাংশ কমে কিছুটা হোঁচট খায়। তৃতীয় মাসে আবারও প্রায় ৫ শতাংশ পতন দেখা দেয়। তবে জুলাই মাসে ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকায় প্রথম চার মাসের গড় রপ্তানি গত বছরের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে, ২.২২ শতাংশ।
শিল্প উদ্যোক্তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত কারখানায় অতিরিক্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে রপ্তানিকে সর্বাধিক করার চেষ্টা করা হয়। ব্র্যান্ড ক্রেতারাও উচ্চ শুল্ক এড়াতে আগাম আমদানিতে আগ্রহ দেখায়। জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রপ্তানির মূল কারণ এটাই। ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে ঘোষিত ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ৭ আগস্ট মধ্যরাত থেকে কার্যকর হয়েছে। এর আগে জাহাজীকরণ পর্যায়ে থাকা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপিত হয়নি।
ইপিবের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকে বড় পতনের কারণে সামগ্রিক রপ্তানির চিত্র মলিন হয়েছে। অক্টোবর মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি ৮.৩৯ শতাংশ কমে ৩০২ কোটি ডলারে নেমেছে, যেখানে গত বছরের একই মাসে এটি ছিল ৩৩০ কোটি ডলার। অর্থাৎ একক পণ্যের রপ্তানি ২৮ কোটি ডলার কমেছে। তবে সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর মাসে পোশাক রপ্তানি ৬.৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিজিএমইএর পরিচালক এ বি এম শামসুদ্দীন আহমেদ বলেন, "পোশাকের রপ্তানি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে চীনের আগ্রাসী রপ্তানি। যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যে উচ্চ শুল্কের কারণে তারা ইইউতে কম দামে পণ্য পাঠাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি কমছে।"
তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাকের দুটি প্রকার রয়েছে; নেভার আউট অব স্টক (এনওএস) এবং ফ্যাশন পণ্য। এনওএস সারাবছর বিক্রি হয়, তাই কম দামে বাজার দখলে নেওয়ার জন্য চীনের জন্য সহজ লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমায় পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। তবে বর্তমানে লিন সিজন হওয়ায় সাধারণত চাহিদা কম থাকে। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত এই অবস্থা থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি এখনও মন্দা নয়।
তৈরি পোশাকের মধ্যে সাধারণত ওভেন বা শার্ট-প্যান্টের তুলনায় নিটের রপ্তানি বেশি হয়। কিন্তু চলতি অর্থবছরের গত তিন মাসে নিট খাতের অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ। বিজিএমইএর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত চার মাসে তৈরি পোশাকের গড় প্রবৃদ্ধি ১.৪০ শতাংশ, নিটের প্রবৃদ্ধি মাত্র ০.৪২ শতাংশ। অক্টোবর মাসে নিটের রপ্তানি ১০.৭৬ শতাংশ কমেছে এবং ওভেনের রপ্তানি ৫.৩৩ শতাংশ পতন ঘটেছে।
শুধু তৈরি পোশাক নয়, অক্টোবর মাসে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের রপ্তানিতেও হ্রাস দেখা গেছে। কৃষিপণ্য রপ্তানি ১০ শতাংশ কমে ১০ কোটি ১৯ লাখ ডলারে নেমেছে, ওষুধ রপ্তানি ৬ শতাংশ কমে দুই কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং চামড়া রপ্তানি ১০ শতাংশের বেশি কমে এক কোটি ডলারে নেমেছে। তবে হোমটেক্সটাইল এবং পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি যথাক্রমে ১৪ এবং ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।