
গণতন্ত্রের পরিবেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যম অপরিহার্য হলেও, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে এ অধিকার হুমকির মুখে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান শাসনব্যবস্থা ফ্যাসিবাদের রূপ নিয়েছে, যেখানে ভিন্নমতকে দমন করা হচ্ছে এবং নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যম টিকে থাকার সুযোগ পাচ্ছে না।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে দৈনিক বার্তার মাল্টিমিডিয়া উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। কিন্তু গত ১৬-১৭ বছর ধরে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে ভিন্নমতের কণ্ঠস্বর দমন করা হয়েছে। যারা ফ্যাসিবাদের দালালি করেছে এবং গুম-খুনের সাফাই গেয়েছে, সেসব গণমাধ্যম টিকে থাকার অধিকার রাখে না।”
তিনি বলেন, সমাজ যখন বিভক্ত ও অনিশ্চয়তার মুখে, তখন একটি দায়িত্ববান সংবাদমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি অনুভূত হয়। গণমাধ্যমের কণ্ঠস্বর দুর্বল হলেও, সত্য বলার জন্য অন্তত একটি জায়গা থাকা দরকার বলে মত দেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনে রিজভী বলেন, সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম ব্যবস্থার মাধ্যমে গুম, খুন ও দমন-পীড়নের ঘটনাগুলোকে আড়াল করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে প্রতিটি গুম-খুনকে আড়াল করেছে এবং ভিন্নমতের মানুষকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে দমন করেছে। শেখ হাসিনা আন্দোলন দমন করতে হেলিকপ্টার থেকে বোমা হামলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এমনকি তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের হত্যা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।”
বিশ্ব ইতিহাসের উদাহরণ টেনে রিজভী বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালি ও জার্মানির স্বৈরাচার-সমর্থক গণমাধ্যমগুলো আর টিকে থাকতে পারেনি। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও সেই পথেই এগোচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তার ভাষায়, “ফ্যাসিবাদী ইতালি কিংবা নাৎসি জার্মানিতে স্বৈরাচারের দালাল মিডিয়াগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টিকে থাকতে পারেনি। তাই বাংলাদেশের গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির সাফাই গাওয়া মিডিয়ারও প্রয়োজন নেই।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ব্যালট পেপার নীলক্ষেত এলাকায় ছাপানো হচ্ছে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। এ প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, “ডাকসু নির্বাচনের ব্যালট পেপার নীলক্ষেতে ছাপা হচ্ছে এমন সন্দেহ অমূলক নয়। অথচ চিফ রিটার্নিং অফিসার আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলছেন। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাহানিকর।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে রিজভী দেশের গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের জন্য অবাধ পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।