
ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর রাস্তাগুলো উৎসবের রেশে মুখর। নতুন পোশাকে শিশু-কিশোররা বাবা-মায়ের হাত ধরে বেরিয়েছে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে। কিন্তু উৎসবের এই আমেজে চোখে পড়ছে আরেক চিত্র – অনেক সড়কেই এখনো পড়ে আছে কোরবানির পশুর বর্জ্য, যা ঈদের পবিত্র আবহে এক ধরনের বৈপরীত্য তৈরি করেছে।
যদিও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গতকাল শুক্রবার রাতেই ফেসবুকে দাবি করেছিলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে শহরের শতভাগ বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আজ সকালে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, অনেক জায়গায় এখনো বর্জ্য পড়ে আছে।
সকাল ৭টা ৩৭ মিনিট। আগারগাঁওয়ের ৬০ ফুট সড়কের মধ্য পীরেরবাগ অংশে দেখা গেল সড়কের অর্ধেক জুড়ে স্তূপ হয়ে পড়ে আছে পশুর উচ্ছিষ্ট। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষজন নাক চেপে চলাচল করছেন, বাতাসে পচা গন্ধ। এর পাশাপাশি পশ্চিম আগারগাঁও ও মধ্যমণিপুর এলাকাতেও একই ধরনের চিত্র। কোথাও প্লাস্টিকে মোড়ানো বর্জ্য, কোথাও আবার খোলা রাস্তায় গরুর ভুঁড়ি ও অন্যান্য অংশ পড়ে রয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ বিভাগ শনিবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে এক বার্তায় জানিয়েছিল, ঈদের দিন বিকেলেই উত্তর সিটি এলাকায় সাড়ে ৯ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন হয়েছে। দাবি করা হয়, ১০ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাত্র সাড়ে ৮ ঘণ্টায় এ কাজ শেষ করেছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির পক্ষ থেকেও একইরকম ঘোষণা আসে। গতকাল রাত ৯টা ৪১ মিনিটে সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, দক্ষিণের ৭৫টি ওয়ার্ড থেকে ১২ হাজার টনের বেশি কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে রাত সাড়ে ৯টার মধ্যেই।
তবে আজ সকালেও কলাবাগান শিশুপার্ক–সংলগ্ন এসটিএস কেন্দ্র, ধানমন্ডি ৮ নম্বর এলাকা, মনেশ্বর সড়ক, নিউ পল্টন লাইন ও আবাহনী মাঠসংলগ্ন জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, এসটিএস বা রাস্তার পাশে এখনও বর্জ্যের স্তূপ পড়ে আছে। কলাবাগান এসটিএসে চার ভাগের এক ভাগ জায়গায় বর্জ্য রয়ে গেছে, এবং সেখানে কর্মীদের কাউকেই দেখা যায়নি।
ভোরে মিরপুর, শেওড়াপাড়া, বেনারসিপল্লি, কালশী ও প্যারিস রোড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে—সিটি করপোরেশনের কনটেইনারভর্তি বর্জ্য এখনও তোলা হয়নি। কোথাও বর্জ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, কোথাও আবার স্তূপ করে ফেলে রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে এসব এলাকায় বর্জ্য সরাতে আর কোনো গাড়ি আসেনি।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানিয়েছেন, বাসাবাড়ি ও অলিগলি থেকে তারা বর্জ্য সংগ্রহ করলেও সেগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য করপোরেশনের গাড়ি আসেনি। ফলে এসটিএসগুলোয় বর্জ্য জমে আছে।
সিটি করপোরেশনের একাধিক ঘোষণা ও উপদেষ্টার ফেসবুক পোস্টে শতভাগ বর্জ্য অপসারণের সাফল্যের কথা থাকলেও বাস্তবচিত্র বলছে ভিন্ন কথা।
গতকাল সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেসবুকে লিখেছেন, “১২ ঘণ্টারও কম সময়ে ঢাকা শহর পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে—এটি দক্ষতা, নিষ্ঠা ও জনসেবায় সরকারের দায়িত্বশীলতার প্রমাণ।” একই সঙ্গে তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ‘নীরব নায়ক’ হিসেবে শ্রদ্ধা জানান।
তিনি জানান, “৩৫ হাজার ২৭২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী এই ঈদে সবার আনন্দে শরিক হয়ে পরিচ্ছন্ন শহর উপহার দিয়েছেন। সকল সহকর্মী ও নগরবাসীর সহযোগিতায় সফলতা এসেছে।”
তবে আজ সকাল পর্যন্ত বাস্তবে দেখা গেছে, সেই সাফল্যের প্রচারে যেমন জোর ছিল, বাস্তবের ময়দানে তেমন তৎপরতা অনেক জায়গায় অনুপস্থিত।
ঢাকাবাসীর কেউ কেউ এই গরমে নাকে রুমাল চেপে সড়ক পার হচ্ছেন, আবার কেউ সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ জানাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে—সিটি করপোরেশনের দাবি আর বাস্তবের মধ্যকার এই ব্যবধান কেন?
পরিস্থিতি যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়, ঈদের আনন্দের পরিবর্তে নগরজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও দুর্গন্ধে ভরা এক তিক্ত অভিজ্ঞতা।