
গাজীপুরে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে তার নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে। শুক্রবার (৮ আগস্ট) মাগরিবের নামাজের পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে বাদ জুমা গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকায় তুহিনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়, যেখানে স্বজন, প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা শেষ শ্রদ্ধা জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, এভাবে একজন নিরীহ মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তুহিন খুব ভদ্র ছেলে ছিল, নিয়মিত বাবা-মায়ের খোঁজখবর নিতো। তিনি জানান, নিহত সাংবাদিক ছিলেন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে ছোট এবং কর্মসূত্রে সবাই সিলেট ও গাজীপুরে থাকতেন।
পাশের বাড়ির বাসিন্দা নাছির উদ্দিন বলেন, তুহিন ছিল অত্যন্ত ভালো ছেলে। তার পরিবারের সবাই শান্ত স্বভাবের। এলাকাবাসীর সঙ্গে মিশে চলতো।” আরেক স্থানীয় আক্রাম হোসেন বলেন, “তুহিন অল্প সময়েই সাংবাদিকতা জগতে খ্যাতি পেয়েছিল। তার পরিবারের প্রধান ভরসা ছিল সে। এখন তার স্ত্রী মুক্তা আক্তার ও দুই সন্তান বিপদের মুখে পড়বে। সরকারের উচিত পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো।
ঘটনার বিবরণ : বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে গাজীপুর শহরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তুহিন সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন। স্থানীয় একটি ছিনতাইকারী চক্র এক ব্যক্তিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করছিল, সেই দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করছিলেন সাংবাদিক তুহিন। বিষয়টি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে ধাওয়া করে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।
পরিবারের শোক : নিহত তুহিন ময়মনসিংহের ভাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. হাসান জামাল ও সাবিহা খাতুন দম্পতির সন্তান। সাত ভাইবোনের মধ্যে তুহিন ছিলেন সবচেয়ে ছোট। তার স্ত্রী মুক্তা আক্তার এবং দুই সন্তান তৌকির (৭) ও ফাহিম (৩) কে রেখে যান তিনি।
৭৫ বছর বয়সী মা সাবিহা খাতুন কান্নায় ভেঙে পড়েন, বলেন, “আমার ছেলে বলেছিল, আমাকে চোখের ডাক্তার দেখাবে। এখন কে আমাকে দেখবে?” বাবা হাসান জামাল ছেলের মৃত্যুতে বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন, আহাজারি করে বলেন, “আমার ছেলে কী অপরাধ করেছিল?
বোন সাইদা আক্তার রত্নাও কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ভাই রাজনীতির সঙ্গে কখনো জড়িত ছিল না। ভালো মানুষেরই হয়তো এই পরিণতি হয়। তার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
তুহিনের জীবন ও কর্মজীবন: তুহিন ২০০৫ সালে ফুলবাড়িয়া আল হেরা স্কুল থেকে এসএসসি, এরপর সিলেটের এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি এবং গাজীপুরের ভাওয়াল কলেজ থেকে অনার্স শেষ করেন। শুরুতে বড় ভাইয়ের ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন, পরে ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি নেন। পাশাপাশি ২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন।
২০০৯ সালে তার বড় ভাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকেই পরিবারে বড় ভূমিকা নিতে থাকেন তুহিন। বর্তমানে পরিবারের আরেক ভাই সেলিম পরিবহন শ্রমিক হিসেবে গাজীপুরে, জাহাঙ্গীর কক্সবাজার টেকনাফে এবং শাজাহান সিলেটে বসবাস করেন। দুই বোন বিবাহিত। বাড়িতে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত বাবা-মা থাকেন, যাদের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করতেন তুহিন ও তার ভাইয়েরা।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তুহিনের পরিবার ও এলাকাবাসী তার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছেন।