
গত সপ্তাহে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে চালানো হামলার পর, ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও অভিযান চালানো হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
সোমবার জেরুজালেমে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু এই মন্তব্য করেন, যা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। তিনি বলেন, “হামাস নেতারা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের কোনো নিরাপত্তা থাকবে না।”
নিজ দেশের সীমান্তের বাইরে গিয়ে হামলা চালানোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও নেতানিয়াহু দাবি করেন, “প্রত্যেক দেশেরই নিজ দেশের সীমানার বাইরেও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।” এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত কি না, এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাবে তিনি বলেন, “আমরা এটা একাই করেছি। এখানেই শেষ।”
সাম্প্রতিক এই দোহা হামলা মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে। এমন এক সময়ে এই বৈঠকটি হলো, যখন বেশ কিছু আরব দেশ কাতারের প্রতি সংহতি জানিয়ে জরুরি সম্মেলনের আয়োজন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওকে দোহা হামলার ভূরাজনৈতিক প্রভাব ও মার্কিন অবস্থান ব্যাখ্যা করতে ইসরায়েল সফরে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, “অবশ্যই আমরা এ ঘটনায় খুশি নই, প্রেসিডেন্টও খুশি নন। তবে এতে আমাদের ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের ধরন বদলাবে না।” রুবিও আরও জানান, ওয়াশিংটন তার উপসাগরীয় মিত্রদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কাতারে চালানো অভিযানে ছয়জন নিহত হয়েছে, তবে তাদের শীর্ষ নেতারা অক্ষত রয়েছেন।
রবিবার এক বক্তব্যে নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ককে বর্ণনা করেন “জেরুজালেমের পশ্চিম দেয়ালের পাথরের মতোই টেকসই” হিসেবে। পরে নেতানিয়াহু, রুবিও ও যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে অবস্থিত ইহুদিদের পবিত্র স্থান পশ্চিম দেয়াল পরিদর্শন করেন। এ সময় রুবিও ঐতিহ্য অনুযায়ী দেয়ালের একটি ফাঁকে নোট রেখে আসেন।
বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এই সফরে গাজা সিটির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ইসরায়েলি সামরিক পরিকল্পনা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সপ্তাহান্তে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির আবাসিক ভবনগুলো ধ্বংসের অভিযান অব্যাহত রাখে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েল শহরের পশ্চিমাঞ্চলে স্থল অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গাজার বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরিয়ে যেতে বলা হলেও অনেকেই জানিয়েছেন, নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছানোর আর্থিক বা লজিস্টিক সামর্থ্য তাদের নেই। কেউ কেউ বলেছেন, দক্ষিণ গাজাও নিরাপদ নয়, কারণ সেখানে নিয়মিত ইসরায়েলি বিমান হামলা চলছে।
জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এই অঞ্চলে সহিংসতা আরও বেড়ে গেলে মানবিক বিপর্যয় মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
এদিকে, আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে আলোচনা তীব্র হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও বেলজিয়ামের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।