
ঢাকায় টানা ক্ষমতাকালীন সময়ে টিএফআই সেলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সেনাবাহিনীর ১০ কর্মকর্তা আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়েছেন। একই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আরও ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে ঢাকার সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে ‘বাংলাদেশ জেল-প্রিজন ভ্যান’ লেখা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সবুজ ভ্যানে তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
আজ হাজির করা ১০ সেনা কর্মকর্তা হলেন র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), কর্নেল মো. মশিউর রহমান (সাবেক পরিচালক, র্যাব গোয়েন্দা শাখা), লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি ড. বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন এবং ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ।
আজ বেলা ১১টার পর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেলে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হবে। শুনানিতে প্রথমে প্রসিকিউশন, পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করবেন। পলাতক আসামিদের পক্ষ থেকে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীরা যুক্তি দেবেন।
আদালত প্রাঙ্গণ ও আশেপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের প্রধান ফটক এবং ট্রাইব্যুনাল এলাকায় পুলিশ, সেনা, র্যাব, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের টহল দেখা গেছে।
এর আগে, ২৩ নভেম্বর শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। ওই দিনও সেনানিবাসের বিশেষ কারাগারে থাকা ১০ কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। তাদের আইনজীবীরা ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদন করেছিলেন, যা নিয়ে আজ পুনরায় শুনানি হবে।
ট্রাইব্যুনাল আগের শুনানিতে মন্তব্য করেছে, “আইন সবার জন্য সমান।” সেই শুনানিতে সাবেক প্রধান বিচারপতিও জেল থেকে সরাসরি হাজির হন এবং সাবেক মন্ত্রীরা নিয়মিত হাজিরা দিয়েছেন।
পলাতক আসামি শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়ানোর আবেদন করেছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্না। পরে তাকে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তবে তিনি মৌখিকভাবে এ মামলায় লড়ার ইঙ্গিত দেননি।
গত ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার পর গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পলাতক আসামিদের সাত দিনের মধ্যে দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হাজির হতে বলা হলেও কেউ উপস্থিত হয়নি। তাই তাদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করা হয়েছে। ৮ অক্টোবর মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গ্রহণ করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।