গণঅভ্যুত্থানে হামলা: ঢাবির ১২২ শিক্ষার্থীর জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে


March 2025/Attack DU students.jpg

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ১২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে হামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। 

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে এ তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল ইসলাম।

সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়টি পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।

তথ্য অনুসন্ধান কমিটি উল্লেখ করেছে যে, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর চিহ্নিত হামলাকারীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হবে।

কমিটির আহ্বায়ক কাজী মাহফুজুল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাবি সরাসরি ফৌজদারি মামলা করতে পারে না। তবে, কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেবে।’

তদন্ত প্রতিবেদনে অনেক সাবেক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেও হামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় তাদের একাডেমিক সনদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

কমিটি ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে বেশ কয়েকজন আক্রমণকারীকে শনাক্ত করেছে। 

এ ব্যাপারে কমিটির আহ্বায়ক জানান, ঢাবি কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

অনুসন্ধানে সহিংসতাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসা নিতে যাওয়ার সময় আহতদের ওপর হামলা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা।

ক্যাম্পাস পোর্টাল, সাধারণ শিক্ষার্থী এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছ থেকে সংগৃহীত ভিডিও প্রমাণ বিশ্লেষণ করে অনুসন্ধান করেছে কমিটি।

মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘নিরপরাধ কারও বিরুদ্ধে যেন অভিযোগ না আসে তা নিশ্চিত করতে আমরা ভিডিও প্রমাণ যাচাই করার সময় বেশ কয়েকটি ডিজিটাল ফ্যাক্ট চেকিং টুল ব্যবহার করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংগৃহীত তথ্য প্রমাণগুলো এই ইঙ্গিত দেয় যে, এগুলো পূর্বপরিকল্পিত হামলা ছিল, শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছিল না।’

তদন্ত কমিটির দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘২০২৪ সালের ১৫ জুলাই হামলার সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে যাওয়ার পথে আহত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা। এছাড়া জরুরি বিভাগের ভেতরে আহতদের ওপর হামলা করা হয়েছে এবং তাদের চিকিৎসায় বাধা দেয়া হয়েছে।’

কমিটির সদস্যরা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে কোনো ফুটেজ পাননি। কারণ কোনো হার্ডড্রাইভ পাওয়া যায়নি।

আন্দোলনের সময় নারী শিক্ষার্থীদের যৌর হয়রানি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘হামলার সময় বাসের ভেতরে আশ্রয় নেয়া নারী শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে, যৌন নিপীড়নের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবুও, প্রতিবেদনে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করা হয়েছে।’

ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসেই নয়, পুরো দেশের ইতিহাসের জঘন্য ঘটনা।’

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×