ধর্ষণের বিচারসহ পাঁচ দাবিতে ছয়দিন ধরে শাহবাগে অবস্থান ঢাবি শিক্ষার্থীর

ধর্ষণের বিচার, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে পাঁচ দফা দাবিতে ছয়দিন ধরে রাজধানীর শাহবাগে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শেখ তাসনীম আফরোজ ইমি। ছয়দিন ধরে অবস্থানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ সংহতি জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি কেউ। সরকারের কেউ দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে তিনি কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন বলে জানান। তাসনীম আফরোজ ইমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি শামসুন নাহার হল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি। গত ৮ মার্চ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘দেশব্যাপী নারী, ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং হেনস্তার প্রতিবাদে লাগাতার অবস্থান’ শুরু করেন ইমি। তিনি বলেন, কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি পরিচয় নয়, একেবারে সাধারণ নাগরিকের ব্যানার থেকে আমি অবস্থান করছি। তবে দুঃখের বিষয় আমি এতদিন অবস্থান করছি কিন্তু কেউ বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। এটা একটা বার্তা দেওয়া হলো-সাধারণ মানুষের কথা কেউ শোনে না। তিনি বলেন, আমার যদি কোনো ক্ষতি হয়, এটার পুরো দায় সরকারকে নিতে হবে। আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি, আমার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস-নিশ্চয়তা যদি আসে তাহলে আমি ঘরে ফিরতে চাই। তার পাঁচ দফা দাবি হলো- ১. ধর্ষণ ও বলাৎকারের বিচার কার্যক্রম নিম্ম আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পন্ন করতে হবে, এবং দ্রুত রায় কার্যকর করতে হবে। ২. আগামী ৭২ ঘণ্টার ভেতর প্রতিটি থানায় একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার নারী ও শিশু নির্যাতন একটি ইমারজেন্সি ক্রাইসিস রেস্পন্স টিম গঠন করতে হবে। একই সাথে থানার অভ্যন্তরে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেখানে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা সহায়তা আইন সহায়তা ও মানসিক এখন সেবা দেওয়া হবে। ৩. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা-২৪ সংশোধন পূর্বক ধর্ষণের শিকার ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের উপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে সেই ধারায় সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। ৪. ধর্ষণের শিকার ভিক্টিমের মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হবে। ৫. নারী ও শিশুর উপর সংঘটিত সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরীর জন্য সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। এই উদ্যোগ গুলোর মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি শ্রেণী স্তরের নারী ও শিশুদেরকে সচেতন করা যাবে। একই সাথে স্কুল-কলেজের পাঠ প্রস্তুকে নৈতিক শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা পাঠদানের বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ঢাবিতে ১৫ জুলাই হামলা: ৭০ শিক্ষক ও ছাত্রলীগের ১২২ শিক্ষার্থী শনাক্ত

জুলাই অভ্যুত্থানে গত বছরের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় তথ্যানুসন্ধান কমিটি ৭০ জন শিক্ষকের প্রমাণ পেয়েছে, যারা নানাভাবে হামলায় ইন্ধন জুগিয়েছেন-উস্কানি দিয়েছেন। হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা খুঁজে পেয়েছে কমিটি। এ ছাড়া নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ১২২ শিক্ষার্থী হামলায় প্রত্যক্ষ জড়ান। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের হাতে এই প্রতিবেদন জমা দেন তথ্যানুসন্ধান কমিটির সদস্যরা। এরপর সাংবাদিকদের প্রাথমিক খুঁটিনাটি তুলে ধরেন কমিটির আহ্বায়ক বিভাগের আইন সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল হক সুপণ। প্রতিবেদনে হামলার ঘটনায় মাত্র ২৫ শতাংশ তারা তুলে আনতে পেরেছেন বলে জানান তিনি। মাহফুজুল হক সুপণ বলেন, পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২২ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করেছি। বহিরাগত অনেকেও হামলায় জড়িয়েছে। বিশেষত মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তিনি আরও বলেন, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মেয়েদেরকে বাস থেকে নামাচ্ছে এবং পেটাচ্ছে। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। বিশেষত মেয়েগুলোকে ধরে ধরে পেটানো হচ্ছে। একজন মেয়ে হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে চাচ্ছিল, তার হাত ধরে রেখেছে, এটা তো শ্লীলতাহানীর পর্যায়ে পড়ে। হামলাকে পূর্বপরিকল্পিত উল্লেখ করে মাহফুজুল হক বলেন, ১৫ জুলাইয়ের হামলা ছিল পুরোটাই পরিকল্পিত। সেখানে দুইটি গ্রুপ ছিল সাদা ক্যাপ পরিহিত; একটি গ্রুপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বরে, আরেকটি গ্রুপ ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে। হামলায় সরকারি বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদেরও পাওয়া গেছে। আগে থেকে পরিকল্পনা না হলে এভাবে সম্ভব না। কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার, ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগের ফটকের এবং জরুরী বিভাগের ভেতরেও হামলা হয়েছে। ডাক্তারদের চিকিৎসা না দিতে বলা হয়েছে। সেসব ভিডিও আমরা পেয়েছি। প্রতিবেদনে কমিটি জানায়, হামলার নিকৃষ্টতম দিক ছিল নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং হাসপাতালে গিয়েও হামলা করা হয় এবং ডাক্তারদের চিকিৎসাপ্রদানে বাধা প্রদান করা হয়। এটিকে তারা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। আহ্বায়ক আরও বলেন, যারা হামলায় বেশি নৃশংসতা দেখিয়েছে, তারা অনেকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। তার ৬ বছরে অনার্স শেষ করার কথা, অথচ ১১ বছরে ধরে অনার্স চলছে। কীভাবে? অনেক ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু তারা হলে ছিল। কীভাবে ছিল? প্রশ্ন তোলেন তিনি। মাহফুজুল হক বলেন, যারা হলপাড়ায় শিক্ষার্থীদের মেরেছে, তারাই মলচত্বরে পেটাচ্ছে, তারাই উপাচার্যের বাসভবনের সামনে পেটাচ্ছে। এরা ওই শিক্ষার্থী, যারা অনেকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকছে। সুপণ বলেন, সেদিন মেয়েদেরকে টার্গেট করে মারা হয়েছে। মেয়েদের ওপর হামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও (ছাত্রলীগের)। এসব হামলায় প্রশাসন অবগত থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে প্রশাসনের নেগলিজেন্সের (অবহেলা) প্রমাণ পেয়েছি আমরা। কমিটির আহ্বায়ক আরও বলেন, উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের সামনে মেয়েদের পেটানো হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন কিছু জানেন না। ১৬ তারিখ বাইরে থেকে বাস এনে মুহসীন হলের মাঠে রাখা হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কোনো ব্যবস্থা দেখেনি। মুজিব হলের পকেট গেট দিয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ করানো হয়েছে, হলের কর্মচারীরা প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের ফোন দিয়েছে। তারা ফোন ধরেননি। এখানে শুধু অবহেলা হয়েছে ব্যাপারটা এমন নয়, হয়তো তারা এসব জানতো। জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। মাহফুজুল হক বলেন, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মেয়েদের পেটানো হচ্ছে। আমাদের কাছে অস্বাভাবিক লেগেছে, উপাচার্য বা প্রশাসনের কেউ উঁকিও দেননি। কোনো মন্তব্য করেননি। পরবর্তীতে কোনো ব্যবস্থাও নেননি। প্রায় ৭০ জন শিক্ষক হামলা উস্কে দেওয়ার ভূমিকা রেখেছেন জানিয়ে কমিটি প্রধান বলেন, আমরা তদন্তে দেখেছি- যারা আন্দোলন করছে, তাদেরকে ‘পাকিস্তানের দালাল’, ‘শিবিরকর্মী’ বা ‘ছাত্রদল কর্মী’- বলে ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন এসব শিক্ষকরা। ছাত্ররা এসব পোস্ট প্রিন্ট করে আমাদের কাছে জমা দিয়েছে। সেসব শিক্ষকরাও এমন কথা স্বীকার করেছেন এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এই প্রতিবেদনে হামলা ও সহিংসতার কতটুকু কাভার করা হয়েছে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আরও শনাক্ত করার সুযোগ আছে। তবে আমরা মনে করি, ২৫ ভাগ তুলে আনতে পেরেছি আমরা। সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়ে মাহফুজুল হক বলেন, আমরা ব্যক্তিগত ভিডিও সংগ্রহ করেছি। কিন্তু আমরা সিসিটিভির ফুটেজ পাইনি। প্রত্যেক হলের হার্ডড্রাইভ খুলে নিয়ে গেছে। ভিসি চত্বরের হার্ডড্রাইভে আমরা কিছু পাইনি। অনেক জায়গায় ক্যামেরা এমনভাবে লাগানো, কেবল গাছ দেখা যায়। প্রতিবেদনের সঙ্গে দেওয়া সংবাদ সংক্ষেপে সত্যানুন্ধান কমিটি জানায়, হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ জমা দিয়েছিল তার সঙ্গে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার কন্টেন্ট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান বিচার বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিবেদন গ্রহণ শেষে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেটে তোলা হবে। এরপর তদন্ত কমিটি ও ট্রাইবুনাল গঠনসহ আইনি প্রক্রিয়াগুলো হবে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ হামলায় প্রায় তিনশত শিক্ষার্থী আহত হন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে মশাল মিছিল

ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনে পুলিশি হামলার বিচার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে মশাল মিছিল করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে এ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, শাহবাগ হয়ে টিএসসিতে এসে শেষ হয়। মিছিলে ‘হত্যাকারীদের বিচার করো, করতে হবে’, ‘খুন ধর্ষণ, নিপীড়ন, রুখে দাও বাংলাদেশ’, ‘খুন-ধর্ষণ হয়নি শেষ, গর্জে উঠো বাংলাদেশ’, ‘আমার বোন মরল কেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জবাব দাও’, ‘অবিলম্বে জাহাঙ্গীরকে অপসারণ করতে হবে’, ‘শিশুরা মরে কেন, প্রশাসন জবাব দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। মশাল মিছিলে শিক্ষার্থীরা তাঁদের তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো—ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনসহ দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশি হামলার বিচার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অব্যাহত ধর্ষণ-নিপীড়ন ও জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা। ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করা মাগুরার শিশুটির মৃত্যুতেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। শিশুটির ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বোনের যন্ত্রণার আগুন আমরা এ মশালের মাধ্যমে প্রজ্বলিত করেছি। তার কি অধিকার ছিল না নিরাপদে বেঁচে থাকার! রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব ছিল না তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার?’ তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র শিশুটির নিরাপত্তা দেয়নি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। ব্যর্থতা শিকার করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি ধর্ষণ-নিপীড়নের অবসান ঘটিয়ে নিরাপদ বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে হবে।’

পুলিশের ওপর হামলার প্রতিবাদে জবিতে বিক্ষোভ মিছিল

রাজধানীতে পুলিশের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক লাকি আক্তারসহ ফ্যাসিবাদের দোসরদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লাকিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। বুধবার রাত ২টার দিকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে রায়সাহেব বাজার প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, শাহবাগ নো মোর’, ‘ল তে লাকি, তুই হাসিনা তুই হাসিনা’, ‘আমার ভাই কবরে,’ ‘আমার সোনার বাংলায় শাহবাগের ঠাঁই নাই’, ‘শাহবাগ না জাস্টিস, জাস্টিস জাস্টিস’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, শাহবাগের কবর দে’, ‘শাহবাগী হামলা করে, ইন্টেরিম কী করে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নূর নবী বলেন, চব্বিশের বাংলায় শাহবাগের ঠাঁই নাই। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করে যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল তারা আবারও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের পুলিশ ভাইদের ওপর হামলা করেছে। আমরা বেঁচে থাকতে এই বাংলাদেশে শাহবাগীদের স্থান হবে না। আমরা শাহাবাগীদের এই দুঃসাহসের বিচার চাই। এ সময় তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাকী আকতারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, যখন এই শাহাবাগীরা মাঠে নেমেছে তখনই বোঝা গেছে এরা আওয়ামী লীগের দোসর। আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই এই লাকিরা শাহাবাগে এসেছে। ইংলিশ বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদ বলেন, এটা ২০২৫ সাল। এটা ২০১৩ নয়। এখানে কোনো লাকী আক্তারের জায়গা হবে না। ২০১৩ সালে নাটকীয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, যেখানেই শাহাবাগীদের পদধ্বনি শোনা যাবে যেখানেই ২৪ এর যোদ্ধারা হাজির হবে এবং শরীরের শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত ঢেলে দেবে তাদের প্রতিহত করার জন্য।

ধর্ষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার দাবি ঢাবির সাদা দলের

ধর্ষণ ও নারীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনাগুলোতে সাত দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপিকে শক্তভাবে অবস্থান নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ঢাবির অপরাজেয় বাংলার সামনে সাদা দলের মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান বলেন, একটা জরিপে দেখা গেছে, এদেশের ৭০ শতাংশ নারী নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করে। মাত্র ৩০ শতাংশ নারী নিরাপদে রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে আমরা নারীদের সুরক্ষা দিতে পারছি না। তাই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপিকে সাত দিন সময় দিচ্ছি। এ সাত দিনের মধ্যে শক্তভাবে অবস্থান নিন। না হলে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসব। আমাদের এ প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।’ অধ্যাপক মোর্শেদ বলেন, ৫ আগস্টের পর সরকারের প্রতি এত দ্রুত সময়ে আমাদের দাবি নিয়ে দাঁড়াতে হবে আমরা চিন্তা করিনি। তারপরও আমাদের দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়েছে। মৃত্যুশয্যায় থাকা আছিয়া মেয়েটির মেডিকেল রিপোর্টটা যদি ব্যাখ্যা করি একটা নির্মমতা প্রকাশ পাবে। তাই, আমি এ প্রসঙ্গে আসব না। আজকে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় আমাদের মা-বোন ও শিশুরা নানা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এটা আমার মনে হচ্ছে একটা পরিকল্পনা। আমাদের কন্সপাইরেসিতে ফেলার জন্য এ কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমরা দেখেছি প্রায় দুই লাখ মা-বোন তাদের জীবন আত্মত্যাগ করেছে। ২৪ সালের আন্দোলনেও নারীরা অগ্রভাগে থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু আজকে আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে পারছি না। এটা সরকারের লজ্জা, আমাদের লজ্জা। সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, একটা দেশ যখন গণঅভ্যুত্থানের পর যাত্রা শুরু করে তখন সব থেকে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে থাকে। তবে অভ্যুত্থানের ছয় মাস পরেও এমন পরিস্থিতি অপ্রত্যাশিত। আমরা দেখছি প্রতিদিন আমাদের নারীরা লাঞ্ছিত হচ্ছে। তাই, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে চাই, আইনের সংস্কার করে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। সাদা দলের সদস্য অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা বলেন, এ দেশে আমরা দেখছি আজ নারীরা নিরাপদ নয়। নারীরা বিভিন্ন জায়গায় হেনস্তা, ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। যেটা এদেশের নারীদের ক্ষমতায়নের বাধা। তাই সকল দলের নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়ে তাদের ম্যানিফেস্টুতে সংযুক্ত করতে হবে। কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে চুরি, ছিনতাই, নারীদের ওপর ধর্ষণের বিরুদ্ধে আমরা এখানে এসে উপস্থিত হয়েছি। অতীতে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট শক্তি বিভিন্ন তাদের নেতাকর্মীদের উসকানি দিচ্ছে। গত সাত মাস ধরে তারা এ সরকারকে বিব্রত করার জন্য নানা পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, আমরা দেখছি গত দু’মাসে অন্তত ২০০ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বিগত ছয় মাসে প্রায় ৫০০ নারী, শিশু, কন্যা ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ষণের শিকার হয়েছে শিশুরা। তাই, জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে আমাদের এ প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।

কুমিল্লায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, ভোগান্তিতে রোগীরা

পাঁচ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের (কুমেক) ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এতে দূরদূরান্ত থেকে হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হয়। চিকিৎসকদের দাবির মধ্যে রয়েছে এমবিবিএস ও বিডিএস ব্যতীত কেউ ডাক্তার উপাধি ব্যবহার করতে পারবে না, ওটিসি ড্রাগস লিস্ট আপডেট করা, স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকের সংকট নিরসন, ম্যাটস ও নিম্নমানের মেডিকেল কলেজ বন্ধ করা এবং চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন। এসব দাবি বাস্তবায়ন না হলে পরবর্তীতে নতুন কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা জানান তারা। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নূরনেছা নামে এক নারী বলেন, ‘চাঁদপুর থেকে নাতিকে নিয়ে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। ১০টায় এখানে পৌঁছে দেখলাম ডাক্তাররা রোগী না দেখে মিছিল করছেন। রোজা রেখে অনেক কষ্ট করে এসে এখন বিপদে পড়লাম।’ সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, ‘অনেকদিন ধরে স্ত্রী অসুস্থ। টাকার অভাবে প্রাইভেট হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে পারি না। যাও আজ মেডিকেলে আসলাম দেখি ডাক্তাররা ধর্মঘট করছেন। এখন বিপাকে পড়েছি বিপাকে।এই অবস্থায় তাকে এখন আমি কোথায় নেবো? টাকা ছাড়া কে চিকিৎসা দেবে?’

ধর্ষণ, নিপীড়ন ও নারী হেনস্থার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের মানববন্ধন

দেশব্যাপী ধর্ষণ নারী হেনস্থার প্রতিবাদ ও শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রদল। সোমবার (১০ মার্চ) চবির শহীদ মিনারের পাদদেশে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন চবি ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহশিন। সঞ্চালনা করেন সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. ইয়াছিন। মানববন্ধনে চবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, ‘সংস্কার সংষ্কার রব তোলা হচ্ছে, প্রকৃত সংস্কার হচ্ছে কোথায়! ধর্ষণের শাস্তির বিধান সংস্কার করতে হবে। অন্যান্য দেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড প্রকাশ্যে কার্যকর করতে হবে। ধর্ষণকে জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা কর‍তে হবে। দেশের বিভিন্ন আদালতে চলমান ধর্ষণ মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যে সব আইনজীবী ধর্ষকদের পক্ষে অবস্থান নিবে, তাদের তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, তারা যদি এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়, তাহলে জুলাই বিপ্লবের মত ছাত্রজনতা বিচারকার্য নিজ হাতে তুলে নিবে।’ আলাউদ্দিন মহশিন বলেন, ‘দেশব্যাপী টানা ধর্ষণ এটা জুলাই পরবর্তী দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীদের হেনস্থা করা হচ্ছে, যেটার কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। আমরা এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে এটার পদক্ষেপ নিতে হবে। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’ মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন কে ইসলাম ফাহিম, ইমন, মামুন, হাবীব, রবিউল, আরিফ, রাকিব, তৌফিক, সাদকিন, মাহবুব, আমান, রুখন, হুমায়ুন।

ধর্ষণের বিচারের দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ রাবি শিক্ষার্থীদের

দেশব্যাপী ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকদের কঠোর শাস্তির দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১০ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নেন। এর আগে বেলা ১১টায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা দলে দলে ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডে জড়ো হতে শুরু করেন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে সড়কে আসেন তারা। এসময় তালাইমারি থেকে একদল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মেইন গেটে এসে বিক্ষোভে যোগ দেন। শিক্ষার্থীরা ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে জবাই কর’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, নো মোর রেপিস্ট’, ‘খুনি কেনো বাহিরে ইনটেরিম জবাব চাই’, ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’, ‘আমার মায়ের কান্না আর না আর না’, ‘তুমি কে আমি কে? আছিয়া আছিয়া’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। অবরোধে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহির আমিন বলেন, বাংলাদেশের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বোনেরা নির্যাতিত হচ্ছে। এমন বাংলাদেশ আমরা চাই না। আমরা এমন এক বাংলাদেশ চাই যেখানে আমাদের মা বোনেরা নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারবেন। সবার আগে আমাদের বোনদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কোথাও কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে ১৫ দিনের তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শাস্তি অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক হতে হবে যাতে আর কেও এমন কাজের সাহস না দেখায়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ১৫ দিন তদন্ত ৩০ দিনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে ডিএনএ সেম্পলিং মেশিন স্থাপন করতে হবে। এছাড়া বিচারকাজে কোনো রকম ফাঁকিবাজি চলবে না। কারোর রাজনৈতিক পরিচয়ে ছাড় দেওয়া চলবে না। এদিকে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ শেষে বেলা ১টার দিকে পরের দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে কর্মসূচি শেষ করেন শিক্ষার্থীরা। স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আগামীকাল সোমবার (১১ মার্চ) আমরা চোখে কাপড় বেঁধে ফেসবুকে শেয়ার ও ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, নো মোর রেপিস্ট’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করবো। এর আগে ধর্ষকদের বিচার দাবিতে রোববারও (৯ মার্চ) ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের মশাল মিছিল

সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী লাগাতার ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে মশাল মিছিল করেছে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ। রোববার (৯ মার্চ) রাত ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো প্রদক্ষিণ করে ফের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। মশাল মিছিল পরবর্তী সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তির আশ্বাস না বরং শাস্তি কার্যকরের দাবি জানান। এমনকি শাস্তি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার অঙ্গীকার করেন নারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা- ‘'উই ওয়ান্ট জাস্টিস, জাস্টিস জাস্টিস’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাংক দ্য র‌্যাপিস্ট’; ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘তুমি কে আমি কে, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোন তোমার বোন, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’; ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’; ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’; ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও'; ‘২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘জাহাঙ্গীর করে কি? খায় দায় ঘুমায় নাকি?’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। সমাবেশ থেকে নারী শিক্ষার্থীরা বলেন, নারীকে নারী হিসেবে না, মানুষ হিসেবে ভাবুন। আমরা ভয়ে থাকি কখন কে আমাদের শরীরে তার কালো হাত দিতে পারে। আমরা আমাদের নিরাপত্তা চাই। আমরা চাই না বাইরে বের হলেই আমাদের উপর কেউ লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকুক। আমরা ধর্ষকদের এমন শাস্তি চাই যা দেখে অন্যদের এই কাজ করতে বারবার ভাবতে হয়। আমরা চাই, তাদের শাস্তি কার্যকর করা হোক। যতদিন এদের বিচার না হবে আমরা রাজপথ ছাড়বো না। দরকার হলে আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবনে গিয়ে তার পদত্যাগে বাধ্য করবো। সমাবেশে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। দাবিগুলো হলো- ১. আসিয়ার মামলার ক্ষেত্রে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের মাধ্যমে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা এবং ১ মাসের মধ্যে আসিয়ার ধর্ষকের বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে আসিয়ার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ২. প্রত্যেক ধর্ষণ মামলার বিচারে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত মামলার বিচার কার্য সম্পন্ন করে সকল ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ৩ কার্যদিবসের মধ্যে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ৩. নারী ও শিশুর নিরাপত্তার প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জবাবদিহি করতে হবে। ৪. সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে 'নারী ও শিশু নিপীড়নবিরোধী সেল' গঠন ও সেলের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে। ৫. ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার বুলিং সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করে অপরাধের স্পষ্ট ও যথাযথ সংজ্ঞায়ন করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, আমরা দেখছি ধর্ষণ বিষয়ক মামলায় আসামীরা ৪/৫ বছরের বেশি জেলা থাকে না। আমরা চাই সেলগুলো গঠন করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা বর্জন করতে হবে। অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে আপনারা সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। আপনারা অপরাধীদের আইনের হাতে তুলে দিন এবং তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করুন। আমরা চাই এ দেশে প্রতিটি অপরাধীর শাস্তি হোক। কর্মসূচি ঘোষণা করে উমামা বলেন, আমরা আগামী ৩ দিনের ভেতরে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি বরাবর লিখিত স্মারকলিপি পৌঁছে দেব। আমরা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য ৩ দিনের আলটিমেটাম দিচ্ছি। এর মাঝে যদি আমাদের দাবিগুলো না মানা হয় আমরা সর্বশক্তি দিয়ে আবার মাঠে নামবো। এর মাঝে আমরা অনলাইন ও অফলাইনে আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে জনমত গঠনে কাজ করে যাবো। সমাবেশে সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থী সামিয়া রশিদ, শামছুন নাহার হলের সামিয়া মাসুদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের শিক্ষার্থী দিলরুবা, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাত, ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সুমি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে চবিতে মশাল মিছিল

মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি হেনস্তা, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবি জানিয়ে আইনি সংস্কারের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। রোববার সন্ধ্যা সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এরপর কাটাপাহাড় রোড হয়ে বিজয় ২৪ হলের সামনে গিয়ে থামে। এ সময় ওই হল থেকে শিক্ষার্থীরা স্লোগানে স্লোগানে প্রতিবাদ জানান। বিভিন্ন হল থেকে বেরিয়ে নারী শিক্ষার্থীরা মশাল হাতে মিছিল করেন। অন্যান্য ছাত্রী হল প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাস হয়ে জিরো পয়েন্ট গেটে অবস্থান নেন। বিক্ষোভকারীরা জানান, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই দেশে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ বাড়ছে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করা হলে তারা আরও কঠোর আন্দোলনে যাবেন। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, দরকার হলে আমরা আরেকটি জুলাই নিয়ে আসব। তাও ধর্ষকদের ফাঁসির মঞ্চে ঝুলাতে হবে। ইংরেজি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নওশিন তাবাসসুম জুথি বলেন, আইনি জটিলতার কারণে ধর্ষকরা বারবার খালাস পেয়ে যায়। আমরা সেই আইন সংস্কার চাই এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি। নারী অঙ্গনের মুখপাত্র সুমাইয়া শিকদার বলেন, আমরা এখনও নিরাপদ নই। নিজের ক্যাম্পাসেই নিজেকে অনিরাপদ মনে হয়। এই অমানুষদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে, যেন তারা কোনোভাবেই আইনের ফাঁক দিয়ে বের হতে না পারে।

ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাবিতে লাঠি মিছিল

সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের (ঢাবি) ক্যাম্পাসে লাঠিমিছিল হয়েছে। রোববার (৯ মার্চ) বিকেল তিনটার দিকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিলে বাঁশের ছোট ছোট লাঠি হাতে রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, শাহবাগ মোড় ঘুরে মিছিলটি আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। এ সময় ধর্ষণসহ নারী নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর অপসারণ এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সব ধর্ষণের বিচার দাবি করেন তারা। লাঠি মিছিলের ব্যানারে লেখা ৯ দফা দাবির মধ্যে আরও রয়েছে- ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া; সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে ধর্ষণ ও নারী-নিপীড়ন প্রতিরোধের আইনসমূহে প্রয়োজনীয় যৌক্তিক সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধনের উদ্যোগে, যৌন হয়রানির প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ, ধর্ষণের মামলা গ্রহণে থানার জটিলতা দূর করা, ভুক্তভোগী ও সাক্ষীকে সকল প্রকার সুরক্ষা দিতে সাক্ষী সুরক্ষা আইনের পুনঃপর্যালোচনা ও প্রয়োগ করা। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা ও বহিষ্কারের ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা; দায়িত্বশীল কেউ ‘স্লাটশেমিং’ করলে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া; এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমন্বয়ে ‘স্বাধীন যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল’ কার্যকর করা। এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন লেখক নিগার সুলতানা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতীকী প্রতিবাদ জানাতে লাঠি নিয়ে এসেছেন। তারা শিশু, নারীসহ প্রত্যেকের নিরাপত্তা চান।’ ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিচার দ্রুত করার আহ্বান জানিয়ে নিগার সুলতানা বলেন, ‘দ্রুত বিচার মানে এই নয় যে কারও সঙ্গে আবার অন্যায় হোক।’ অপরাধীরা শাস্তি পেলে অপরাধ করার প্রবণতা কমে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ধর্ষণের প্রতিবাদে ঢাবি ঢামেক বুয়েটে বিক্ষোভ

সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারীর প্রতি নিপীড়ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও মাগুরায় শিশুকে ধর্ষণের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। রোববার (৯ মার্চ) সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষক নেটওয়ার্ক, রাজু ভাস্কর্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা, বুয়েট শহীদ মিনারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি বিভাগ বিক্ষোভ করেছে। কর্মসূচি থেকে শিশু ধর্ষণে দ্রুত সময়ে বিচার, বিগত সময়ের সব ধর্ষণ-নিপীড়নের বিচার শুরু করা, ধর্ষণের ঘটনায় বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করার দাবি এবং নারীর প্রতি গৃহ থেকে পাবলিক পরিসরে পুলিশিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিস্ক্রিয়তা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও ওঠে। শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিবাদ সমাবেশ: রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিবাদ সমাবেশে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্লাটফর্ম থেকে ৯ দফা দাবি জানানো হয়। সমাবেশে ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, ‘নারীর ওপর নিপীড়ন গৃহ থেকে পাবলিক পরিসরে দেখতে পাই। এই নির্যাতনগুলো চলছে। সমাজ এই নির্যাতনকে স্বাভাবিকীকরণ করে। নির্যাতনের স্ট্রাকচার এমন হয়েছে যে, নির্যাতকরা জানে, তার কোনো শাস্তি হবে না। আর নারীকে দোষ দেবে, সে কেন পথে বেরিয়েছে।’ তিনি আর বলেন, ‘একেবারে মাইক্রো লেভেল থেকে এই নির্যাতন টিকিয়ে রাখার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। যদি না এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে না দাঁড়ান তাহলে তিনি নির্যাতক ব্যবস্থার অংশ। এটা ঠেকাতে হবে প্রত্যেককে। সবাই একসঙ্গে মিলে নারী, দুর্বলের ওপর নির্যাতন রুখে দেওয়া সম্ভব।’ চলমান নারীর প্রতি সহিংসতার কথা উল্লেখ করে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক তাসনীম মাহবুব বলেন, ‘নারী উপদেষ্টারা কী আদৌ আছেন? দেশে কী ঘটছে, ওনারা কী সে ব্যাপারে সচেতন? ওনারা তো এগিয়ে আসতে পারেন, সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু সেরকম কোনো উদ্যোগ দেখছি না।’ কর্মসূচিতে ঢাবি ক্যাম্পাসে নারীকে হেনস্তার ঘটনায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা কয়েকটি দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘থানা থেকে ভুক্তভোগী ছাত্রীর ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে পড়া এবং অভিযুক্তের নারীকে নিয়ে অশালীন বক্তব্য দিয়ে বাধা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পুলিশদের বিচার করা, ভুক্তভোগীকে সাইবার বুলিং এবং ধর্ষণের হুমকিদানকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা, অভিযুক্তকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে বরখাস্ত করতে হবে।’ সমাবেশ থেকে দেওয়া ৯ দফা দাবি পাঠ করেন শিক্ষার্থী নওরীন সুলতানা তমা। দাবিগুলো হলো- জননিরাপত্তা দানে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দায় স্বীকারপূর্বক পদত্যাগ করতে হবে; সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; সারাদেশে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নিপীড়নের সব ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে; প্রয়োজনে ধর্ষণের ঘটনার বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইবুনাল গঠন করতে হবে; সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে ধর্ষণ ও নারী-নিপীড়ন প্রতিরোধের আইনসমূহে প্রয়োজনীয় যৌক্তিক সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধন করতে হবে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রের জন্য যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল গঠন আইন করে বাধ্যতামূলক করতে হবে; প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে জেন্ডার সংবেদনশীলতার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ধর্ষণ মামলা গ্রহণে জটিলতা তা দূর করতে হবে। বিশেষ আইন অথবা বিশেষ সেলে’র অধিকারবলে ধর্ষণের অভিযোগ যে কোনো থানা গ্রহণ করবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে; ভুক্তভোগী ও সাক্ষীকে সব ধরনের সুরক্ষা প্রদানের জন্য ২০১১ সালে পর্যালোচিত সাক্ষী সুরক্ষা আইন পুনরায় পর্যালোচনা ও প্রয়োগ করা; চবির নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা, স্লাটশেমিং এবং বরখাস্তের ঘটনা পূর্ণ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমন্বয়ে স্বাধীন যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। সেলে আবশ্যিক নারী সদস্য থাকবে। অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে, দোষীকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা উক্ত সেলকে দিতে হবে। সমাবেশে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, শিক্ষক ফাহমিদুল হক, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান, কবি ও লেখক ফেরদৌস আরা রুমি, সংস্কৃতিকর্মী সুস্মিতা রায় বক্তব্য দেন। এদিকে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ চত্বরে, রাজু ভাস্কর্যে প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ভূতত্ব বিভাগ, বাংলা বিভাগসহ একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা পৃথক ব্যানারে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন। তারা মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকদের ফাঁসির দাবি জানান এবং ধর্ষণের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। রাজু ভাস্কর্যে ঢামেকের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: ঢামেকের শিক্ষার্থীরাও রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। তারা নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং ধর্ষকের ফাঁসি দাবি করেছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেখতে চান তারা। বিশেষ করে মাগুরায় ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন তারা। বুয়েট শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি: ধর্ষণের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। এসময় ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বুয়েট একতাবদ্ধ উল্লেখ করে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডসহ ছয়টি দাবি উত্থাপন করেছেন তারা। রোববার সকালে মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদক্ষেপ দৃশ্যমান ও সন্তোষজনক নয়।’ তারা দাবি জানান- দেশের ধর্ষণ আইন পরিবর্তন করে দ্রুত ট্রাইবুনালের মাধ্যমে শাস্তি দ্রুত সময়ে কার্যকর করতে হবে; মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীদের এই নতুন আইনে দ্রুত সময়ের মধ্যে নজিরবিহীন শাস্তি কার্যকর করতে হবে; সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া সব নারী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে; নারী নির্যাতনের ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া ও বিচারিক কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; আইনি সহায়তা ও বিচারের প্রক্রিয়া নারীবান্ধব করে তুলতে হবে; সর্বোপরি বাড়িতে, বাইরে সর্বত্র নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের পদক্ষেপ দৃশ্যমান ও কার্যকর হতে হবে।

ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে রাবি শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ এবং ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রোববার (৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বেলা ১১টার দিকে বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্যারিস রোডে জড়ো হতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে আগামীকাল সোমবার একইভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বেলা সাড়ে ১১টায় মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে? আমি কে? আছিয়া আছিয়া’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, নো মোর র‌্যাপিস্ট’, ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে বিচার কর’, ‘খুনি কেন বাহিরে, ইন্টেরিয়ম জবাব চাই’, ‘বিচার বিচার চাই, ধর্ষকের বিচার চাই’, ‘গোলামি না আজাদী, আজাদী আজাদী’ প্রভৃতি স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘সারাদেশে ধর্ষণের ঘটনায় যদি কোনো বিচার করতে না পারেন, তাহলে শেখ হাসিনার অবস্থাটা মনে করিয়ে দিতে চাই। আমাদের যেন আবার ১ দফা দাবি নিয়ে মাঠে নামতে না হয়। আমাদের বোন আছিয়ার ধর্ষণের ঘটনা, ইন্টেরিয়ম এড়াতে পারে না। শুধু আছিয়া নয়, এতদিন যত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে সব ঘটনার বিচার করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের বোনদের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আজকে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। অবিলম্বে ধর্ষকদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে ধর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলো বন্ধ করতে না পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের শাসনকার্য পরিচালনার অধিকার রাখে না। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আপনারা যে চেয়ার পেয়েছেন, সেটার মূল্যায়ন করতে না পারলে অবিলম্বে চেয়ার ছেড়ে দেন। এই দেশের ছাত্র-জনতা স্বৈরাচার হাসিনাকে সরাতে পারলে ধর্ষকদেরও এই বাংলার মাটি থেকে বিতাড়িত করার ক্ষমতা রাখে। আজকে শিক্ষার্থীদের জনসমুদ্র আরেকটি জুলাইয়ের ইঙ্গিত করে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাচ্ছি না।’

ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা

সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৯ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ধর্ষকদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় ঢামেকের নারী শিক্ষার্থীদের। এসময় তারা ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’, ‘Hang the rapist, we want Justice’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। ঢামেকের অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, যারা ধর্ষণ করে এবং যারা এদের মদদ দেয় তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এর আগে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ধর্ষণের সেঞ্চুরি করা হয়েছে। ধর্ষকে রাজনৈতিক দল এবং নির্বাহী ক্ষমতা যারা ছিল তারা তাকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। ভোট না দেওয়া কারণে উলঙ্গ করে ভিডিও বানিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, দেশে চলমান এসব ধর্ষণের সুরাহা হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ বিষয় সচেতন হতে হবে। তাদের নেতাকর্মীদের সচেতন করতে হবে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সমাবেশ এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা প্রতিবাদ করা না পর্যন্ত ধর্ষকদের কেন বিচার শুরু হয় না? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে আমরা দায়িত্ব তুলে দিয়েছি। আপনারা কোনও দলীয় সরকার নন। এরপরে ধর্ষকদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারছেন না। প্রতিটি ধর্ষিত বোনের পাশে আমরা আছি। তাদের ধর্ষণের বিচারের জন্য আমরা রাস্তায় নামবো। এর আগে ঢামেক শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে এসে জড়ো হয়। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাধিক শিক্ষক সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহণ করেন।

দেশব্যাপী ধর্ষণ-যৌন হয়রানি, ঢাবি শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন

দেশে চলমান লাগাতার ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনায় ধর্ষকদের উপযুক্ত শান্তি নিশ্চিতকরণ এবং দেশব্যাপী যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শান্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। রোববার (৯ মার্চ) বেলা সোয়া ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা- ‘We want we want, Justice Justice’, ‘we want Justice, hang the rapist’; ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘তুমি কে আমি কে, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোন তোমার বোন, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’; ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’; ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’; ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও'; ‘২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘জাহাঙ্গীর করে কি? খায় দায় ঘুমায় নাকি?’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। লোক প্রশাসন বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ মিছিলে লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির, অধ্যাপক আবু হুসাইন মোহাম্মদ আহসান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শেহরিন আমিন ভূইয়া একাত্মতা পোষণ করে মিছিলে অংশ নেন। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে লোক প্রশাসন বিভাগের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাকিবুল বাশার বলেন, আগের সরকার কীভাবে পালিয়েছে সেটাকে ভুলে যাবেন না। আপনি রাত ৩টায় এসে আমাদেরকে সিরিয়াসনেস বুঝাবেন না। আমরা রাস্তায় সিরিয়াসনেস দেখতে চাই। আমাদের মা-বোনদের নিরাপদ দেখতে চাই, আমরা এত প্যাঁচ দেখতে চাই না। আরেক শিক্ষার্থী তুয়াম্মুম কবির বলেন, আমরা এই ধর্ষকদের ১ মিনিটের ফাঁসি চাই না। আরও কঠিন শাস্তি কার্যকর করতে হবে। একজন ধর্ষিতা বোন যেমন কষ্ট সহ্য করে এদের তার চেয়ে কঠিন শাস্তির মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত করতে হবে। লোক প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শেহরিন আমিন ভূইয়া বলেন, আমরা শুধু আইনের কথা বলি, রুলসের দোহাই দেই। কিন্তু এই রেপিস্টদের শাস্তি দিতে ১০ দিনের বেশি সময় লাগার কথা না। ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অতি দ্রুত প্রকাশ্য শাস্তি কার্যকর করতে পারলে ধর্ষণের পরিমাণ কমে আসবে। লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক আবু হুসাইন মোহাম্মদ আহসান বলেন, আমাদের প্রতিবাদ প্রতিনিয়ত জানাতে হবে। এটা কীটের মতো রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। এটাকে সমূলে উৎপাত করতে হবে। লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির বলেন, এই ধর্ষকরা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। পশুরা অন্তত তাদের বাচ্চাদের সাথে এসব করে না। কিন্তু আমাদের ছোট মেয়ে আসিয়াকেও তারা ছাড় দেয়নি। আমরা যেন এই ঘটনাগুলো ভুলে না যাই। আমরা ভুলে যাই বলেই ধর্ষকরা কিছুদিন পরপর তাদের রূপ দেখায়।

ধর্ষণের বিচার চেয়ে মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দাবি

ধর্ষকদের প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবি জানিয়ে মশাল মিছিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রীরা। এ ছাড়া রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রীদের আরেকটি মিছিল বের হয়। মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিয়ে নানান স্লোগান দিচ্ছেন। তারা ‘ধর্ষকদের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাঙ্গ দ্যা রেপিস্ট’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’সহ স্লোগান দিতে থাকেন। শনিবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ভিসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে পুনরায় রোকেয়া হলের সামনে আসে। মিছিলে তারা ধর্ষকদের প্রকাশ্য মৃত্যদণ্ড কার্যকর এবং বিগত বছরগুলোতে যারা ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান ছাত্রীরা। মিছিল শেষে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা হলের সামনে জড়ো হন। মাগুরায় একটি শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় তারা এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। এরপর একজন নারী শিক্ষার্থী স্লোগান দেন, ‘আমরা কি ধর্ষকদের বাইরে দেখতে চাই?’ তখন বাকি ছাত্রীরা সমস্বরে ‘না’ বলে ওঠেন। রোকেয়া হলের ছাত্রী ফারজানা আক্তার আরজু বলেন, ‘সম্প্রতিএকটি শিশুর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে দুজন পুরুষ ও একজন মহিলা জড়িত। এই ধর্ষকদের আমরা প্রকাশ্য ফাঁসি চাই। যে মহিলা সহযোগী ছিল, তারও ফাঁসি চাই। ধর্ষণ প্রমাণিত হলে, তার একমাত্র শাস্তি হবে প্রকাশ্য ফাঁসি। আমরা আর গ্রেপ্তার গ্রেপ্তার নাটক আর দেখতে চাই না। শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্ত হব না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে সতর্ক করতে চাচ্ছি। বিগত বছরগুলোতে যতগুলো ধর্ষণ হয়েছে, সবগুলোর বিচার করতে হবে। সরকার যদি একটা ফাঁসি দেয়, তাই দৃষ্টান্ত হয়ে যাবে।’ হলের আরেক শিক্ষার্থী আদিবা সায়মা খান বলেন, ‘আমরা ধর্ষকদের স্থায়ী শাস্তি চাচ্ছি। আমরা যদি বাইরে বের হই এবং আমাদের যদি নিরাপত্তাই না থাকে, তাহলে এই রাষ্ট্র আমাদের কী দিচ্ছে। সরকারের দায়িত্ব আমাদের নিরাপত্তা দেওয়া। আইন-শৃঙ্খলা উন্নত করা। ধর্ষকদের এমন শাস্তি দেওয়া যেন অন্যকেউ পুনরায় সেরকম চেষ্টাও না করতে পারে।’ এ দিকে দেশব্যাপী সংগঠিত ধর্ষণ, নারী বিদ্বেষী মবের আগ্রাসন এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ধর্ষণবিরোধী গণপদযাত্রা করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে ক্যাম্পাসে পদযাত্রাটি অনুষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতারা বলেন, ফ্যাসিবাদী প্রশাসনিক কাঠামো ভাঙতে না পেরে আমাদের রাষ্ট্র নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। বয়স, পেশা, ধর্ম নির্বিশেষে নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে, তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহবায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, নারীরা নিজের ঘরে নিরাপদ না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপদ না, কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ না। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী নারীর প্রতি ঘটা সহিংসতাকারীদেরকে শনাক্ত করতে প্রায়ই ব্যর্থ হয়, আটক করলেও জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। আইন মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড লিখিত থাকলেও তা কার্যকর করা হয় না। তিনি বলেন, আমরা মনে করছি, কাঠামোগতভাবে এই রাষ্ট্র ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম না, আমরা মনে করি আইনগত দূর্বলতা বাংলাদেশে ধর্ষক তৈরি করে। আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি ধর্ষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে, নারীবিদ্বেষী আগ্রাসী মব, বিচারহীনতার বিরুদ্ধে। এমতাবস্তায়, আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে ধর্ষকদের শ্রেণি, বয়স, পেশা, ক্ষমতা নির্বিশেষে দ্রুততম সময়ে শনাক্তকরণ করতে হবে, আটক করতে হবে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

হিযবুত তাহরীর সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে কুবি শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে গেছে র‍্যাব

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণিত বিভাগের ২০১৭-২০১৮ সেশনের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হান্নান রাহিমকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে তুলে নিয়ে গেছে র‍্যাব-১১। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দিয়েছে। শুক্রবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় কোটবাড়ি থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় র‍্যাব। জানা গেছে, নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে যুক্ত থাকার তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদ হান্নান রাহিমকে তুলে নিয়ে যায় র‍্যাব। পরে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এ বিষয়ে র‍্যাব -১১ এর উপ পরিচালক লে. কমান্ডার মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা একটি তথ্যের ভিত্তিতে তাকে নিয়ে গেছিলাম কথা বলার জন্য, জিজ্ঞাসাবাদে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। পরে তাকে থানায় হস্তান্তর কর হয় এবং থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি সনজুর মোর্শেদ বলেন, তাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। শুধু হিযবুত তাহরীর সন্দেহে কথা বলার জন্য র‍্যাব নিয়ে এসেছিল। পরে থানায় আনা হয়। কথা বলার পর এখন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ছাত্র শিবিরের টাকার উৎস জানালেন জবি সেক্রেটারি, ছাত্রদল নিয়ে রেখেছেন পাল্টা প্রশ্ন

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের এত টাকা কোথা থেকে আসে, এমন প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন। শুক্রবার (৭ মার্চ) বিকেল ৩টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলার কনফারেন্স কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্ন তোলেন তিনি। ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদকের এই মন্তব্যের পর এবার ছাত্রদলের টাকার উৎস জানতে চেয়েছেন জবি শিবির সেক্রেটারি মো. রিয়াজুল ইসলাম। একই সঙ্গে শিবিরের টাকার উৎস সম্পর্কেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, শিবির কর্মীরা তাদের টিউশন করা জমানো টাকা ছাত্রকল্যাণ ফান্ডে দান করে। আমাদের মায়েরা তাদের গলার হার আমাদের বিশ্বাস করে দিয়ে দেয়। শুক্রবার (৭ মার্চ) ছাত্রদল সম্পাদকের ওই মন্তব্যের পর সন্ধ্যার দিকে জবি শিবির সেক্রেটারি রিয়াজুল ইসলাম তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে লিখেন, আমাদের আয়ের উৎস গুলো আমাদের সংবিধানে সুস্পষ্ট করে বলা আছে। তিনি পোস্টে লিখেন, অর্থ-ব্যবস্থা/বায়তুলমাল ধারা-৩৬ : সংগঠনের প্রত্যেক স্তরে বায়তুলমাল থাকবে। কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের দান, সংগঠন-প্রকাশনীর মুনাফা এবং শরিয়ত অনুমোদিত অন্যান্য খাতসমূহ থেকে প্রাপ্ত অর্থই হবে বায়তুলমালের আয়ের উৎস। আমাদের কর্মীরা তাদের টিউশন করা জমানো টাকা ছাত্রকল্যাণ ফান্ডে দান করে। আমাদের মায়েরা তাদের গলার হার আমাদের বিশ্বাস করে দিয়ে দেয়। আমাদের বোনেরা রান্নার মুষ্টি চাল জমা করে আমাদের দিয়ে দেয়। তিনি সেই পোস্টে আরও লিখেন, আমাদের ভাইয়েরা তাদের বেতনের কষ্ট করা টাকা কোনো প্রকার চিন্তা ভাবনা ছাড়াই আমাদের দিয়ে দেয়। আমাদের সকল সাবেক ভাইয়েরা আমাদের টাকা দেয়, বিপদের দিনে আমাদের আশ্রয় দেয়। আমাদের কোনো ব্যক্তিগত আয় নেই কোনো ব্যক্তিগত ব্যয় নেই। আমাদের যা আয় যা ব্যয় সব সংগঠনের জন্য নিবেদিত। যারা আমাদের নিয়ে প্রশ্ন করেন তাদের অনুরোধ করবো বুকে হাত রেখে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলেন আপনার দলের টাকা কোথা থেকে আসে? রিয়াজুল নিজ পোস্টের বিষয় ছাড়াও আরও কিছু কথা জানিয়েছেন চ্যানেল 24 অনলাইনকে, তিনি বলেন, আমরা আমাদের যায়গা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছি এখানে উস্কানিমূলক কোনো কিছু বলিনি, আমরা সাবলীলভাবে বিবরণ তুলে ধরেছি তারাও তুলে ধরুক কোথা থেকে টাকা তারা পায়। আমাদের যেমন প্রকাশনী রয়েছে মাসে ১২টা, পত্রিকা বের হয়, ডায়েরি, ক্যালেন্ডার বের হয়। মাসিক বই বের হয়, সেখান থেকে যে লাভ হয় সেটা আমাদের আয়ের উৎস। এছাড়া আমাদের শিবিরের সাবেক ভাইয়েরা শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে টাকা পয়সা দেয়। শরীয়ত নির্ধারিত অন্যান্য খাত যেমন রমজানে কুরআন ও ইফতার বিতরণের ক্ষেত্রে কেউ যদি ভালোবেসে ১০টা কুরআন বা ইফতার বিতরণের সহায়তা করেন সেগুলোই আমাদের উৎস। শরীয়ত নির্ধারিত অন্যান্য খাত যেগুলো ইসলাম অনুমোদন করে সেগুলো আমরা গ্রহণ করি। ছাত্রদল সম্পাদকের এ মন্তব্য নিয়ে পরবর্তী কোনো কর্মসূচি আসবে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা কেন্দ্রীয় কমিটি বলতে পারবে, এ নিয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারিকে বলতে শুনেছি তারা প্রতিদিন গণ-ইফতার কর্মসূচিতে তিন লাখ টাকা ব্যয় করছেন। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, তারা এত টাকা কীভাবে উপার্জন করছেন। তাদের আয়ের উৎস কী? একটি সাধারণ ছাত্র সংগঠন মাসে ৯০ লাখ টাকা কোথায় পাচ্ছে, এই তথ্য আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে শিবিরের কাছে জানতে চাই।

তদন্ত চলাকালে চাকরি থেকে অব্যাহতিতে থাকবেন অভিযুক্ত মোস্তফা আসিফ

ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক রেখে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার অভিযুক্ত মোস্তফা আসিফ অর্নব অব্যাহতিতে থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেলে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিন তদস্যের তদন্ত কমিটিতে আরও রয়েছেন- সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান। তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, তদন্ত কমিটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করবে। ভুক্তভোগী, অভিযুক্ত সবার সঙ্গে কথা বলবে এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে যা যা করার তা করবে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট অভিযুক্তের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত চাকরিতে থাকতে পারবে না। এদিকে সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম বলেছেন, তারা যাবতীয় ঘটনার বিশ্লেষণ করা শুরু করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক রেখে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার অভিযুক্ত মোস্তফা আসিফ অর্নব অব্যাহতিতে থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিন তদস্যের তদন্ত কমিটিতে আরও রয়েছেন- সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান। তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, তদন্ত কমিটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করবে। ভুক্তভোগী, অভিযুক্ত সবার সঙ্গে কথা বলবে এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে যা যা করার তা করবে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট অভিযুক্তের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত চাকরিতে থাকতে পারবে না। এদিকে সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম বলেছেন, তারা যাবতীয় ঘটনার বিশ্লেষণ করা শুরু করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

ঢাবি ছাত্রীকে ‌‘ড্রেস ঠিক নাই’ বলে উত্ত্যক্ত কর্মচারীর, পোস্ট ভাইরালের পর আটক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রীকে পোশাক নিয়ে মন্তব্য করে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সহকারী-বাইন্ডার মোস্তাফা অর্নব অরণ্য নামের এক কর্মচারীকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। আজ বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনার বিবরণ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রী পোস্ট করলে তা ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অভিযোগকারী ছাত্রী ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘এই লোকটা আজকে আমাকে শাহবাগ থেকে আসার পথে হ্যারাস করেছে। সে আমাকে হুট করে রাস্তায় দাঁড় করায় দিয়ে বলতেসে আমার ড্রেস ঠিক নাই আমি পর্দা করি নাই ইত্যাদি ইত্যাদি এবং তার আচরণ খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিল। পরবর্তীতে তাকে আমি জিজ্ঞাসা করি আপনি কোন হলে থাকেন কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন। সে বলে সে এই ক্যাম্পাসের কেউ না।’ ওই শিক্ষার্থী আরও অভিযোগ করেন, ‘আমি সালওয়ার কামিজ পরে ঠিক মত ওড়না পরে ছিলাম। সে আমাকে বলে আমার নাকি ওড়না সরে গেছে। Then আমি তাকে বললাম এইটা তো আপনার দেখার বিষয় না আর আপনার তাকানোও জাস্টিফাইড না। এরপর আমি প্রক্টরকে কল দিতে চাইলে সে দৌড় দিয়ে চলে যায়।’ এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, ঘটনাটি ছাত্রীটি তাদের জানালে তারা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেন। অভিযুক্ত কর্মচারীকে শনাক্ত করে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, খুব দ্রুত তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হতে পারে। এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর আহমদ জানান, শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে, অভিযুক্ত ব্যক্তির আটকের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলেছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি শুধু ‘ভালো পর্দার পরামর্শ’ দিয়েছিলেন, অন্যায় কিছু করেননি। আবার কেউ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে একজন কর্মচারীর এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয় এবং সেটি নারীদের জন্য অনিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পারে। কাজী মাযহারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন, তিনি শাহবাগ থানায় গিয়ে অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, অভিযুক্ত কর্মচারী কাঁদতে কাঁদতে তাকে বলেছেন, তিনি শুধু কয়েকজন ছাত্রীকে ওড়না পরতে বলেছিলেন, কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তার ওপর রেগে যান এবং পরে গুরুতর অভিযোগ তোলেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যরাতে ছাত্রীদের বিক্ষোভ

ধীরগতির নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধানের দাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১২ টার দিকে স্লোগান দিতে দিতে হল থেকে ক্যাম্পাসের অভিমুখে রওনা হন তারা। এরপর তারা ক্যাম্পাসে এসে ভিসি ভবনের সামনে এসে অবস্থান নেন। দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেট সমস্যায় ভুগছেন হলের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রমজান মাস উপলক্ষে আগামী রবিবার (১০ মার্চ) থেকে অনলাইন ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, বর্তমান ইন্টারনেট সংযোগের দুর্বলতা অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণকে প্রায় অসম্ভব করে তুলবে। ১৬ তলা বিশিষ্ট হলটিতে কিছু নির্দিষ্ট স্থানে ওয়াই-ফাই সুবিধা থাকলেও তা অত্যন্ত দুর্বল, ফলে শিক্ষার্থীরা ই-লাইব্রেরিসহ অনলাইন রিসোর্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ওয়াই-ফাই সুবিধার সীমাবদ্ধতার কারণে তারা বাধ্য হয়ে নিজেদের খরচে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, যা বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে। ১৮তম ব্যাচের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের শিক্ষার্থী অংঙখ্রা বলেন, "হলে কার্যকর ওয়াই-ফাই না থাকায় আমাদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। ডাটা কিনে ইন্টারনেট ব্যবহার করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।" ইংরেজি বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ঐশী বলেন, "নেটওয়ার্ক সমস্যা আমাদের জন্য বড় বাধা। পড়াশোনার জন্য অনেক তথ্য অনলাইনে খুঁজতে হয়, যা এই দুর্বল নেটওয়ার্কে সম্ভব নয়। দ্রুত নেটওয়ার্ক উন্নত করা প্রয়োজন।" এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, "আমি নতুন নেটওয়ার্ক কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি, তবে এখনো কোনো আপডেট পাইনি। ছাত্রীদের বলবো কিছুদিন ধৈর্য ধরতে।"

স্নাতকের ফল প্রকাশের আগেই রাবিতে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগ

স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক মাস আগেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইসিটি সেন্টারে একজনকে অ্যাডহক ভিত্তিতে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ১৮ নভেম্বর তাকে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপত্রের অফিস আদেশ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের প্রকাশিত ফলাফল পর্যালোচনা করে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। অফিস আদেশ ও ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের ১৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক অফিস আদেশে মোমেন খন্দকার অপি নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থীকে আইসিটি সেন্টারে সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে নিয়োগ দেয়। তার নিয়োগের প্রায় এক মাস পর ১২ ডিসেম্বর তার স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা বলছেন, দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী স্নাতক পাস করেই একজন প্রার্থীকে প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে যোগদান করতে হয়। সহকারী প্রোগ্রামার পদটি সেকশন কর্মকর্তা পদমর্যাদার। অর্থাৎ প্রথম শ্রেণির চাকরি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নিয়োগের প্রথম ধাপ। এ পদে নিয়োগের জন্য ন্যূনতম স্নাতক পাস হতে হয়। চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগেই যদি নিয়োগ দেওয়া হয়, তবে সেক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। নিয়োগপ্রাপ্ত মোমেন খন্দকার অপি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। চাকরিতে যোগদানের এক মাস পর প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, তিনি স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষায় ৩ দশমিক ২০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারে সহকারী প্রোগ্রামার পদে টাকা ২২০০০-৫৩০৬০/- (বাইশ হাজার) টাকা বেতনে সহকারী প্রোগ্রামার পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ করা হলো। এ নিয়োগ যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।’ নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, স্নাতকের চূড়ান্ত সনদ পাওয়ার আগে কাউকে প্রথম শ্রেণির চাকরি দেওয়ার সুযোগ নেই। স্নাতকের সনদ না পাওয়া মানে সে এইচএসসি পাস। এইচএসসি পাসের সার্টিফিকেট দিয়ে কেউকে প্রথম শ্রেণির চাকরি দেওয়া মানে তা অন্যায়। এ ধরনের কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের সাবেক এক পরিচালক বলেন, সহকারী প্রোগ্রামার পদে নিয়োগ দিতে হলে কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে তাকে ন্যূনতম স্নাতক পাস হতে হবে। তবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোমেন খন্দকার অপি সমকালকে বলেন, গত নভেম্বরে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগেই আমার স্নাতক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমাদের অফিসিয়াল ফলাফল বের হতে দেরি হয়েছে। তবে আমি আনঅফিসিয়াল ডকুমেন্ট দেখিয়েছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. রোকানুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, আনঅফিসিয়াল ফলাফল কখনও প্রকাশ হয় না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারও ইমপ্রুভমেন্ট ইস্যু বা হলের সিটের আবেদনের জন্য হলে তাকে এ বিষয়ে জানানো হয়ে থাকে। তবে কেউ যদি চাকরির মতো জায়গায় ব্যবহার করে তাহলে আমি দায়িত্ব নেব না। চাকরির ক্ষেত্রে আমরা বলি, ফলাফলের অপেক্ষা করতে। নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘বিষয়টি আমি আগে জানতাম না। কিছুক্ষণ আগেই জানতে পেরেছি। সে ‘অ্যাপিয়ার্ড’ করে করেছে কিনা, আমাকে একটু দেখতে হবে। এই নিয়োগের বিষয়টি আমি সম্পূর্ণ আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের এখতিয়ারে ছেড়ে দিয়েছিলাম। নিয়মকানুনের বিষয়ে আমি রেজিস্ট্রার ও আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলব। বিষয়টি আমি দেখছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ছাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আমার দপ্তরে তখন লোকবলের দরকার ছিল। আমি তাৎক্ষণিক সব ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করে লোক পাব না। তাই তাকে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি তার কাজে অত্যন্ত দক্ষ। তিনি তার ব্যাচের সব থেকে ভালো প্রোগ্রামার।

সিলেটে এমসি কলেজের টিলায় আগুন

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ভেতরের একটি টিলায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বুধবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে নগরীর বালুচর এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনে। সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. বেলাল হোসেন সাড়ে ৭টার দিকে বলেন, “বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আমাদের দুটি ইউনিট এক ঘণ্টার মত কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। “তবে এমসি কলেজের টিলায় আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষনিকভাবে জানা যায়নি। আগুনের সূত্রপাত বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে জানানো হবে।” অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে জানতে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল আনাম মো. রিয়াজের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

টকশোতে শিক্ষার্থীকে ‘রাজাকারের ছেলে’ বললেন বিএনপি নেতা, ঢাবিতে বিক্ষোভ

টকশোতে এক ছাত্র প্রতিনিধিকে ‘রাজাকারের ছেলে’, ‘আলবদরের ছেলে’ বলার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের ছবিতে অগ্নিসংযোগ করেছে ছাত্র-জনতা। একই সঙ্গে তারা অবিলম্বে ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি এই নেতার বিরুদ্ধে দলীয় সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (৫ মার্চ) বিকেলে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে ফজলুর রহমানের ছবিতে অগ্নিসংযোগ করে আওয়ামী লীগ ও মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধের দাবিতে ২১ দিন ধরে গণঅবস্থানকারী ছাত্র-জনতা। এর আগে অনলাইন টক শো ‘ফেস দ্য পিপল’-এ ছাত্র প্রতিনিধি মিনহাজ উদ্দিনকে বিএনপি নেতা ফজুলর রহমান ‘রাজাকারের ছেলে’ ‘আলবদরের ছেলে’ বলে সম্বোধন করেন। মঙ্গলবার রাতে এই টকশোর ক্লিপস সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। এর মধ্যেই বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও তার ছবিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা বলেন, শেখ হাসিনা ছাত্রদের যে ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ আখ্যা দিয়ে জুলাই গণহত্যা ঘটিয়েছেন, ফজলুর রহমানও তারই পুনরাবৃত্তি করেছেন।জুলাই গণহত্যার শহীদদের দাগ না মুছতেই ফের ‘রাজাকারের ছেলে’ সম্বোধন ছাত্রদের নতুন করে আতঙ্কিত করছে। বিক্ষোভকালে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্যসচিব গালীব ইহসান বলেন, ‘আজ আমরা ফজলুর রহমানের ছবিতে আগুন জ্বালাচ্ছি, এর কারণ হলো ৫ আগস্টের পরে আমরা যে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি তিনি তা মানতে পারেননি। তিনি যেখানে সেখানে বিপ্লবীদের যা মন চায় তা বলে কটাক্ষ করছেন। তিনি ফ্যাসিবাদের সুরে কথা বলছেন।সর্বশেষ একটি টক শোতে একজন ছাত্র প্রতিনিধিকে তিনি রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন। শেখ হাসিনা এই রাজাকারের বাচ্চা বলে জুলাই গণহত্যা ঘটিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ফজলুর রহমানসহ সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন করে কোনো তরুণকে ছাত্রকে রাজাকারের সন্তান বললে তা বরদাশত করা হবে না। নব্য ফ্যাসিবাদীদের বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।’ বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ সরকারের কাছে অবিলম্বে বিএনপি নেতা ফজুলর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তিনি বলেন, একজন ছাত্রকে ‘রাজাকারের ছেলে’ বলায় ফজুলর রহমানকে সমগ্র ছাত্রসমাজের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ সদস্যসচিব ফজলুর রহমান বলেন, ‘ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার প্রেতাত্মা ফজলুর রহমানের ঘাড়ে চেপেছে। তা না হলে ৫ আগস্টের পর তার দুঃসাহস হতো না আমাদের ছাত্র ভাইকে রাজাকারের ছেলে সম্বোধন করার।’ কর্মসূচিতে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্যসচিব মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার ও আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় সদস্য তামিম আনোয়ার, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়ামিন সরকার, সিনিয়র সহকারী সদস্যসচিব ইসতিয়াক আহমদ ইফাত, সহকারী সদস্যসচিব আশরাফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যসচিব মুহিব মুশফিক খান ও বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।