পূর্বধলায় জীবিত তিনজনকে মৃত্যু সনদ, ভাতা তুলছেন অন্যরা
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৬:৪৫ পিএম, ০৫ জুন ২০২৪

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার তিন ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জীবিত তিন ব্যক্তিকে মৃতের সনদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে তাদের বয়স্ক ও বিধবা ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিকার চেয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউএনও খবিরুল আহসান।
ভুক্তভোগীরা হলেন– খলিশাউড় ইউনিয়নের গড়ুয়াকান্দা গ্রামের হযরত আলী (৭১), হোগলা ইউনিয়নের জামিরাকান্দা গ্রামের মৃত সুরুজ আলী ফকিরের স্ত্রী জহুরা খাতুন (৭৭) ও পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের উকুয়াকান্দা গ্রামের মৃত মামুদ আলীর মেয়ে খাদিজা আক্তার (৬০)। তাদের মধ্যে হযরত আলী ও জহুরা খাতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তাদের দাবি, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, মেম্বার, সমাজসেবা কর্মকর্তা মিলে তাদের মৃত দেখিয়ে অন্য ব্যক্তিদের ভাতা সুবিধা করে দিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যানদের দাবি, তাদের ভুলের কারণে এমনটি হয়েছে। অভিযোগের অনুলিপি নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক ও জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক বরাবর দেওয়া হয়েছে।
হযরত আলী বলেন, দীর্ঘদিন বয়স্ক ভাতা পেতেন তিনি। ভাতার দুই কিস্তি তাঁর মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে না আসায় বিষয়টি জানতে সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নেন। সমাজসেবা কর্মকর্তা জানান খলিশাউড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়রাম্যান কমল কৃষ্ণ সরকারের দেওয়া প্রত্যয়ন মোতাবেক তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে। এ কারণে তাঁর নামে বরাদ্দ বয়স্ক ভাতা অন্য ব্যক্তিকে দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে খলিশাউড় ইউপি চেয়ারম্যান কমল কৃষ্ণ সরকার বলেন, একই গ্রামের হযরত আলী নামে দুই ব্যক্তির একজন মারা গেলে ভুলবশত জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানো হয়েছে। এই ভুল সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে সমাজসেবা অফিসে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে।
জহুরা খাতুনের অভিযোগ, তিনিও নিয়মিত বয়স্ক ভাতাভোগী ছিলেন। হঠাৎ ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নেন। পরে জানতে পারেন তাঁকেও ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকনের স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নে মৃত দেখানো হয়েছে। এ কারণে তাঁর পরিবর্তে হালিমা খাতুনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে এক বছর ধরে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
তবে হোগলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকনের দাবি, তাঁর অজান্তে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ভুলবশত এমনটি করেছেন। তবে ভুল সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে কাগজপত্র নিয়ে সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করা হয়েছে। অতি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।
পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের উকুয়াকান্দা গ্রামের মৃত মামুদ আলীর স্ত্রী খাদিজা আক্তার ২০১৯ সালে যাচাই-বাছাই শেষে বিধবা ভাতার কার্ড পান। ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ভাতা পান তিনি। এই ভাতার টাকায় নিজের ব্যয় বহন করতেন। গত বছরের মার্চ মাসের পর থেকে ভাতা পাচ্ছেন না তিনি। কারণ জানতে সমাজসেবা অফিসে খবর নিতে গেলে তাঁকে জানানো হয়, ‘আপনি তো মারা গেছেন। তাই ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বুলবুল বলেন, ‘বিধবা ভাতা না পাওয়ার ব্যাপারে আমাকে কেউ জানায়নি। এ ধরনের বিষয় অহরহ ঘটছে। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে সমাধানের জন্য আমরা সমাজসেবা বিভাগে পাঠিয়ে দিই।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা মৃত্যু সনদ দিয়ে সুপারিশ পাঠালে ভাতাভোগী দু’জনকে মৃত দেখিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রকৃত বিষয়টি যেহেতু জানা গেছে, কয়েক দিনের মধ্যে সংশোধনের ব্যবস্থা করা হবে।
পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খবিরুল আহসান জানান, জীবিত ব্যক্তিকে মৃতের সনদ দিয়ে ভাতা কেটে দিয়ে অন্যজনের নামে প্রতিস্থাপনের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগেও হয়রানির বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে খাদিজা আক্তার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সমাজসেবা বিভাগে বিষয়টি সংশোধনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতাসাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।