হরিজন কলোনি উচ্ছেদের প্রতিবাদে খুলনায় মানববন্ধন
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০১:৪১ পিএম, ১০ জুলাই ২০২৪
খুলনা: রাজধানীর মিরনজিল্লা হরিজন কলোনি উচ্ছেদের প্রতিবাদে খুলনায় মানববন্ধন হয়েছে।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) আয়োজনে এ মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বিডিইআরএম এর জেলা কমিটির সভাপতি সুব্রত কুমার মিস্ত্রী।
এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির উপদেষ্টা জাতীয় মানবাধিকার ইউনিট খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি শেখ আব্দুল হালিম (বীর মুক্তিযোদ্ধা), বিডিইআরএম কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নিশীথ রঞ্জন মিস্ত্রী,, বিডিইআরএম এর নারী বিষয়ক সম্পাদিকা লিপিকা বৈরাগী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন খুলনা জেলা শাখার সভাপতি সলিসিটর প্রসেনজিৎ দত্ত ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্তর্গত মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিতে প্রায় চার’শ বছর ধরে দলিত-হরিজন জনগোষ্ঠীর বসবাস। বর্তমানে এখানে প্রায় আট’শ দলিত-হরিজন পরিবার বসবাস করছে। যারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ নগরীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে। এ জনগোষ্ঠী ঢাকা নগরীকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও বর্জ্য অপসারণের মধ্য দিয়ে নগরীকে সুন্দর ও বাসযোগ্য রাখার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করার কারণে ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর মিরনজিল্লার দশজন হরিজনকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। বর্তমানে এ কলোনিতে ওই ১০ জন শহীদের স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। কলোনিবাসীসহ হরিজন জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বহুবার দাবি উত্থাপন করা সত্ত্বেও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী এ ১০ জনকে শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজ সে মহান শহীদদের উত্তরসূরী ও জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের ১০/ ১২ ফুট আয়তনের ঘরে একাধিক প্রজন্ম নিয়ে বসবাস করা বসতঘরটি হারানোর ভয় নিয়ে জীবনযাপন করছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কাঁচা বাজার করার জন্য গত ১১ জুন মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। কলোনির পার্শ্ববর্তী দেয়াল ও ৭টি ঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে ফেললে হরিজন কলোনির বাসিন্দাদের ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবাদের মুখে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ।
এ অভিযানের ফলে হরিজন কলোনির দেয়াল, ৭টি বসতঘর সম্পুর্ণ ও ২২টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বসতভিটা হারিয়ে অসহায় মানুষগুলো তাদের ঘর-বাড়ির অবশিষ্ট ধ্বংসস্তুপে খোলা আকাশের নিচে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। উচ্ছেদের চরম আতঙ্ক ও উৎকন্ঠার মুখে কলোনিবাসীদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এরপর এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার ওপর ৩০ দিনের স্থিতিবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম)-এর পক্ষ থেকে দলিত-হরিজন বান্ধব প্রধানমন্ত্রী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এ উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধের ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর উপযুক্ত ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন করার দাবি জানাচ্ছি।