বদরগঞ্জে এক স্কুলেই ২০ যমজ শিক্ষার্থী


TRT 03-10-2024/bc876e2031bfcb49c42fc81cb3046883-6737058edbb6b.jpg

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০ যমজ শিশু রয়েছে। চেহারায় মিল থাকায় যমজদের আলাদা করতে অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সহপাঠীদের, শিক্ষকেরাও প্রায়ই বিপাকে পড়েন। ওই শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অভিভাবকদের মধ্যেও বেশ উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায়।  

অভিভাবক দিলদার আলী ও আক্তার বলেন, ‘আমাদের দুই শিশু রুকু ও রিভা এই স্কুলে পড়ে। আরও ২ যমজ শিশু এই স্কুলে পড়াশোনা করেছে এর আগে। ওই দুইজন এখন অন্য স্কুলে পড়ছে।’  

শিশু শ্রেণির যমজ দুই শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমানের বাড়ি মোস্তফাপুর গ্রামে। তাদের মা বৃষ্টি আক্তার বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করছি। চাওয়া-পাওয়া সব একই রকম তাদের। একজন বিদ্যালয়ে না আসলে আরেকজন আসতে চায় না। একজন তাড়াতাড়ি যেতে চাইলে আরেকজন আর অপেক্ষা করতে চায় না।  আমরা সবকিছু মেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ওদের নিয়ে সবার মধ্যে বাড়তি আনন্দ ও ভালোবাসা কাজ করে।’

অভিভাবক রাশিদা বেগম বলেন, ‘যমজ সন্তান লালন–পালন করা কষ্টের। ওদের চাহিদা, রুচিবোধ আলাদা। ছেলে খেতে ভালোবাসে মুরগির রোস্ট। মেয়েটার পছন্দ পোলাও, মাংস ও মিষ্টি। তবে যতই ঝগড়া করুক, একজন আরেকজনকে ছেড়ে থাকতে চায় না।’

বদরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির শিক্ষক অনিতা রানী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এমন অনেক যমজ শিশুকে শিক্ষা দিয়ে আসছি। ক্লাসে তাদের আচরণ দুজনের সাধারণত একই রকম হয়। বাথরুমে কেউ একজন যেতে চাইলে অন্যজনও যেতে চায়। তবে এই সুবিধাগুলো আমরা দিয়ে থাকি, কারণ আমরা ওদেরকে বুঝতে পারি।’

বদরগঞ্জের শাহপাড়া গ্রামের মুকুল দাস ও শেলি রাণী দম্পতির যমজ সন্তান বর্ণা ও বৃষ্টি। আদর করে ডাকেন হাসি ও খুশি নামে। ওরা দেখতে প্রায় একই রকম। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই বোনকে শনাক্ত করতে প্রায়ই বিপাকে পড়েন শিক্ষকেরা।

দশ বছরের শিশু নিশাত মুনির ও এ এস এম মুনতাসির মুবিন। ওরা দুজন যমজ। বদরগঞ্জের বালুয়াভাটা গ্রামে বাড়ি। বিদ্যালয়ে ওই ভাই-বোনের খুনশুটি চোখে পড়ে। 

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখানে বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়ছে ৬০৭ শিশু। শিক্ষক আছেন ১৩ জন। রংপুর জেলায় ভালো ফলাফলের জন্য সুনাম থাকায় অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের এখানে ভর্তি করানোর জন্য বেশ আগ্রহী। 

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মইনুল ইসলাম শাহ বলেন, ‘আমি গর্বিত এজন্য যে, অভিভাবকেরা তাদের শিশুদের অন্য প্রতিষ্ঠানে না দিয়ে আমার এখানে ভর্তি করেন। আমার বিদ্যালয়ে ২০ যমজ শিশু রয়েছ। এসব যমজ শিশুরা দেখতে অভিন্ন হওয়ায় কখনো কখনো ক্লাসে শনাক্ত করা মুশকিল হয়ে যায়। তবে যমজ শিশুদের ওদের সহপাঠী ছাড়াও অন্য শিশুরা বেশ পছন্দ করে। আমরা শিক্ষকেরাও তাদের প্রতি বাড়তি নজর রাখি।’

২০ যমজ শিশুর একই বিদ্যালয়ে পড়ার খবর জেনে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিক উজ জামান ওই শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। রফিক উজ জামান বলেন, ‘এসব যমজ শিশুর প্রতি যেন বিশেষ নজর রাখা হয়, সেটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। শিশুদের ব্যাপারে মা-বাবার পক্ষ থেকে কোনো পরামর্শ থাকলে শিক্ষকরা যেন সেটি গুরুত্বসহ দেখেন। কারণ, যমজ শিশুরা তো অন্যান্য সাধারণ শিশুর মতো না। ওদের নিয়ে মধুর বিড়ম্বনায় পড়তে হয় শিক্ষকদের।’

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বিকাশ মজুমদার জানান, যমজ শিশুদের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা ও বিকাশে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। একসঙ্গে জন্ম হলেও এদের আচার–আচরণ, রুচিবোধ ও চাহিদা ভিন্ন হতে পারে। তবে যমজ শিশুরা পরস্পরের মধ্যে সহজেই ভাব বিনিময় করতে পারে।

Your Image ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×