চাঁদা না পেয়ে প্রবাসীর পরিবারের নয়জনকে কুপিয়ে জখম
- গাজীপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৮:২৮ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় প্রবাসীর কাছ থেকে দুই লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে তার পরিবারের নয়জনকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে। গেল শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের দেওয়ানের চালা গ্রামে নির্মাণাধীন বাড়িতে এই নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় প্রবাসীর ছোট ভাই উমর ফারুক শনিবার (২১ ডিসেম্বর) শ্রীপুর মডেল থানায় পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন স্থানীয় সন্ত্রাসী রুবেল, রুমান, মোস্তফা, সুমন ও রমজান।
সিঙ্গাপুর প্রবাসী মো. রাসেল জানান, প্রবাসে দীর্ঘ দিন থাকার পর দেশে ফিরে পরিবারের জন্য একটি বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। গত ২৬ নভেম্বর তিনি নিজ গ্রামে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। নির্মাণকাজ শুরুর কয়েক দিন পর স্থানীয় রুবেল, রুমান, মোস্তফা, সুমন ও রমজান তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। রাসেল চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অভিযুক্তরা নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। তারা প্রবাসীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে এবং বার বার হুমকি দেয়। রাসেল স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করলেও অভিযুক্তরা তার কোন কথা শোনেনি। শুক্রবার সকালে অভিযুক্তরা দলবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাসেলের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা নির্মাণাধীন বাড়ির কাজ বন্ধ করার পাশাপাশি প্রবাসীর পরিবারের ওপর আক্রমণ করে। হামলায় রাসেলের মা, ভাই, বোনসহ পরিবারের নয় সদস্য গুরুতর আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা লাঠি, রড, চাপাতি ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে। তাদের আক্রমণে পুরো এলাকা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে রাসেলের মা ও এক ভাইয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বাকি আহতরা স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। পরিবারের সদস্যরা এ হামলার পর থেকে চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
দেওয়ানের চালা গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, অভিযুক্তরা এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আসছে। তারা এলাকার প্রবাসী ও বিত্তশালীদের টার্গেট করে চাঁদা দাবি করে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘রুবেল ও তার সহযোগীরা এলাকার পরিচিত চাঁদাবাজ। তাদের কারণে আমরা সবাই আতঙ্কে থাকি। যারা তাদের দাবি মেনে নেয় না, তাদের এভাবেই শাস্তি দেয়।’
স্থানীয়রা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আমাদের এলাকার জন্য কলঙ্ক। প্রশাসনের উচিত এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া।’
রাসেল বলেন, ‘আমার জীবনের পুরো সঞ্চয় দিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু, এ হামলার কারণে আমরা পরিবারসহ চরম বিপদে পড়ে গেছি। আমাদের নিরাপত্তা নেই। আমি প্রশাসনের কাছে জোরালোভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি, এই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’
রাসেলের পরিবার এ ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তারা এখন গ্রামে নিজের বাড়িতে থেকেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’
এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের ক্ষোভ ও আতঙ্ক বেড়ে গেছে। ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করা জরুরি।
শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এলাকায় চাঁদাবাজির মত অপরাধের বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’