প্রতারণা করে কলেজছাত্রীকে বিয়ের অভিযোগ এএসআইয়ের বিরুদ্ধে
- টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৮:৩৪ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
মামলার তদন্ত করতে গিয়ে কলেজছাত্রী রিয়া আক্তারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহাঙ্গীর আলম। পরে বিভিন্ন কৌশলে ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। কাজি অফিসে নিয়ে বিয়েও করেন। একসঙ্গে বসবাস করেন। সম্প্রতি অন্য থানায় বদলি হয়ে যাওয়ার পর থেকে ওই কলেজছাত্রীকে স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করছেন জাহাঙ্গীর। গেল ৬ জুন ১৫ লাখ টাকার দেনমোহরে ঢাকার রায় সাহেব বাজারের কাজি মাওলানা মো. সাদেক উল্যাহ ভুইয়া তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি করেন।
রিয়া আক্তার টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল গ্রামের রাজা খানের মেয়ে ও করটিয়া সাদত কলেজের ছাত্রী। জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বলদিঘাট এলাকার সাহাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি নাগরপুর থানা থেকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বদলি হয়ে ফরিদপুরের নগরকান্দা থানায় যোগ দিয়েছেন।
ওই কলেজছাত্রী প্রতারণা ও তথ্য লুকিয়ে বিয়ে করার প্রতিকার চেয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার, ফরিদপুর পুলিশ সুপার ও নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি। গত ২৪ নভেম্বর টাঙ্গাইলের আদালতে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করেছেন তিনি। এছাড়া, গত ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর আলাদা একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী।
লিখিত অভিযোগে রিয়া আক্তার বলেন, ‘দেলদুয়ার থানায় একটি মামলার তদন্ত করতে দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইলে আমাদের বাড়িতে আসে জাহাঙ্গীর আলম। ওই সময় তার সঙ্গে পরিচয় ঘটে। পরে বিভিন্ন কৌশলে আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে ঢাকায় একটি কাজি অফিসে নিয়ে বিয়ে করে। এরপর থেকেই আমরা দুইজনে একসঙ্গে বসবাস করেছি। পরবর্তী নাগরপুর থানা থেকে ফরিদপুরে বদলি হওয়ার পর থেকে কোন যোগাযোগ করছে না। তাদের বাড়িতেও আমাকে নিচ্ছে না। পরে জানতে পারি তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তাকে তালাক দেওয়ার জন্য মোবাইলে বার বার প্রাণনাশ ও মামলার ভয় দেখাচ্ছে।’
ভুক্তভোগী রিয়া আক্তার বলেন, ‘প্রেমের ফাঁদে ফেলে ও তথ্য গোপন করে আমাকে বিয়ে করেছে জাহাঙ্গীর। বিয়ের পর একসঙ্গেই ছিলাম কয়েক মাস। ৫ আগস্টের পর অন্যত্র বদলি হওয়ায় তার আরেক বিয়ের তথ্য পাই। বদলি হওয়ার পর থেকেই আমার কোন খোঁজখবর নেয় না। তার স্ত্রী ও সন্তান থাকার পরও প্রতারণা করে আমার জীবন নষ্ট করেছে। আমি তার সঙ্গে সংসার করতে চাই ও স্ত্রীর মর্যাদা চাই। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আদালতেও মামলা করেছি। এখন তাকে তালাক দিতে বার বার হুমকি দিচ্ছে। বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।’
অভিযুক্ত নগরকান্দা থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কাজি অফিসে বিয়ে করেছি ঠিক আছে। আইনিভাবে বিষয়টির সমাধান করা হবে।’
নগরকান্দা থানা ওসি মোহাম্মদ সফর আলী বলেন, ‘রিয়া নামের ওই মেয়েটি থানায় এসেছিলেন। জাহাঙ্গীর তাকে নিয়ে সংসার করবে না বলে জানিয়েছেন। তবে, ওই মেয়ে কোন অভিযোগ দেয়নি। টাঙ্গাইলে মামলা হওয়ার বিষয়ে কিছু জানা নেই।’
নাগরপুর থানার ওসি এইচএম জসীম উদ্দিন বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় তাকে নাগরপুর থেকে বদলি করা হয়েছে। বদলি হওয়ার পরই জানতে পারি তিনি রিয়া নামে একজনকে বিয়ে করেছেন। যেহেতু নাগরপুর থানায় তিনি কর্মরত নেই, সুতরাং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব না।’