ফের স্বৈরাচারের উদ্ভব হবে যদি শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার না করা হয়: সলিমুল্লাহ খান


5Feb 2025 (Naeem)/shalimullah.webp

অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। জান-রক্ত দিতে হয়েছে। স্বৈরাচারের উদ্ভব ঠেকাতে ভবিষ্যতের জন্য আবার আমাদের জান-রক্ত দিতে হবে কিনা তা পরিষ্কার না। ফের স্বৈরাচারের উদ্ভব হবে যদি শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার না করা হয়।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে অনুষ্ঠিত অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, মেধার প্রশ্ন না তুলে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব ছেলেমেয়েকে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বুনিয়াদি শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। স্কুল-কলেজ, ছাত্র-শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে আমরা এমন এক নতুন প্রজন্ম পাবো, তারা দেশের জন্য উন্নত জনশক্তি-মেধাশক্তির একটা শর্ত পূরণ করবে।

তিনি বলেন, বিপ্লবের ইতিহাস দেখবেন, বিপ্লব নিজেই নিজের ছেলেদের খেয়ে ফেলে। যারা আন্দোলনের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন এখন তারা নিজেদের মধ্যেই মারামারি করে। আমরা নানাদিক থেকে দাবি উত্থাপন করেছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সভা-সমাবেশ করার অধিকার ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বাস্তবক্ষেত্রে শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো সংস্কার করার বিষয়ে হাতই দেয়নি। একই অবস্থা আমাদের স্বাস্থ্যক্ষেত্রের বিষয়েও প্রযোজ্য। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হচ্ছে। মূল উৎপাদন শক্তি বিদ্যুৎ, যা না থাকলে কারখানা চলে না। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। আমরা যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোনো কাজে আসছে না। ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে তা কোনো কাজে আসছে না।

ভারতের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, আমাদের কলকারাখানা, ঘরবাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত না রাখলে উৎপাদন হচ্ছে না। গত ১৫-১৬ বছরে ব্যাপক হারে দেশের সম্পদ আত্মসাৎ-বিদেশে পাচার হয়েছে। এখন এই সরকারের উচিত সেই টাকা দেশে ফেরত আনা। যাদের কাছে জমা তা বাজেয়াপ্ত করা। কিন্তু সরকার একজনের টাকাও বাজেয়াপ্ত বা বিদেশ থেকে আনেনি। এদিকে শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছে না, বন্ধ হচ্ছে কারাখানা সেদিকে সরকারের পদক্ষেপ নেই।

তিনি বলেন, এই আন্দোলন আমাদের নতুন কথা উত্থাপন করার অবকাশ দিয়েছে। এর মধ্যে অভ্যুত্থানের আপাতত স্বার্থকতা। অভ্যুত্থানের সামনে অজস্র বিবাদ বিরাজমান। অনেকেই বিপদগামী হতে চাচ্ছেন। নৈরাজ্য তৈরি করলে হবে না, আমাদের গভীর ধৈর্যের সঙ্গে এ অগ্নিপরীক্ষায় পার হতে হবে। কোন মায়া বা মোহ ৭২ এর সংবিধানের জন্য রাখা যাবে না। ১৯৭১ কি ২০২৪ এর বিরুদ্ধে দাড়াচ্ছে? মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কি বিলুপ্ত হবে? তাদের আমি সবিনয় জিজ্ঞেস করি ১৯৭১ এর ব্যবসা যারা করেছিলেন, তারা কি ১৯৪৭ কে কখনো ক্রিয়া সাধন করেছেন? ইতিহাসের ৫৩ বছরে ১৯৪৭ নিয়ে সরকারিভাবে কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। তারা নিজেরা যেহেতু ৪৭ এর অবলুপ্ত করে দিয়েছে, এর দায়দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। এজন্য তারা মনে করছে ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ১৯৭১ এর সব স্মৃতিকে মুছে দেবে। এ ধরণের কাজ করার লোকের অভাব নেই, সেই জন্য আমরা ২০২৪ কে ভুলে যেতে পারি না।

বরিশাল গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল আয়োচিত আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি জহিরুল ইসলাম কচি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকার, সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়, বরিশাল ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে আজাদ, অ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দুলাল মজুমদার প্রমুখ।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×