বরগুনায় বাস কাউন্টার দখল নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ
- বরগুনা প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১১:১২ পিএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
/borguna amtoli.jpg)
বরগুনার আমতলীতে বাস কাউন্টার দখলে নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১৭ জন আহতবরগুনার আমতলীতে বাস কাউন্টার দখলে নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১৭ জন আহত
বরগুনার আমতলীতে বাস কাউন্টার দখলে নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১৭ জন আহত হয়েছেন। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমতলী পৌর এলাকার বাঁধঘাটে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের পটুয়াখালী ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতদের মধ্যে রাহাত ফকির (২৯), ফরহাদ ফকির (৩২), আলী (২৫), সামসুল হক চৌকিদার (৪২), রেজাউল চৌকিদার (৩৫), বেল্লাল চৌকিদার (৩০), আল আমিন (৩৭), মিজানুর রহমান (৩৫), শহীদ (২১), বায়েজিদ (২৬) ও মিল্টনকে (৩৮) পটুয়াখালী ও শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত অন্য ব্যক্তিদের স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আমতলী পৌরসভার বটতলা ইউনিক পরিবহনের কাউন্টার দখল নিয়ে আমতলী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কবির ফকির ও আমতলী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সামসুল হক চৌকিদারের মধ্যে বিরোধ চলছে।
সামসুল হক চৌকিদারের দাবি, তাকে ইউনিক পরিবহন কর্তৃপক্ষ কাউন্টার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। অন্যদিকে কবির ফকিরের দাবি, ইউনিক পরিবহন কর্তৃপক্ষ তাকে কাউন্টার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। তবে চার মাস ধরে কবির ফকির ওই বাস কাউন্টার পরিচালনা করেছেন।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে যুবদল নেতা সামসুল হক চৌকিদারের লোকজন বাস কাউন্টারটি দখল করতে যান। এ সময় কবির ফকিরের চাচাতো ভাই আমতলী উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত আহ্বায়ক জালাল ফকিরের দুই ছেলে রাহাত ফকির ও ফরহাদ ফকিরের নেতৃত্বে বাস কাউন্টার দখলে বাধা দেওয়া হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, শনিবার সকালে বটতলা ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের ইউনিক পরিবহন কাউন্টারের তালা সামসুল হক চৌকিদারের লোকজন ভেঙে ফেলেন। এ নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে ওই দিন দুপুরে বাঁধঘাট চৌরাস্তায় কবির ফকিরের লোকজন সামসুল হক চৌকিদারের ওপর হামলা চালান। পরে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষ ধারালো দা, রামদা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া দেওয়ায় শহরের বটতলা থেকে নতুন বাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। আতঙ্কিত হয়ে লোকজন দৌড়ে পালিয়ে যান এবং ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদে চলে যান।
সংঘর্ষের কারণে আমতলী থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলরত অর্ধশতাধিক বাস কাউটার বন্ধ হয় হয়ে যায়। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাউন্টারগুলো বন্ধ ছিল। সন্ধ্যায় কয়েকটি কাউন্টার খোলা হয়।
সামসুল হক চৌকিদার বলেন, ‘ইউনিক বাস কাউন্টারটি আমার নামে। এ নিয়ে দুই দফায় সালিশ বৈঠকও হয়েছে। তারপরও শুক্রবার রাতে কবির ফকিরের নেতৃত্বে তার লোকজন কাউন্টারের তালা ভেঙে ল্যাপটপ এবং টিকিট নিয়ে যান। শনিবার দুপুরে তারা আবারও কাউন্টার দখলে নিতে গেলে আমাদের লোকজন বাধা দেন। তারা আমাদের তিন কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেন। আমার ডান হাতের একটি আঙুল কেটে গেছে।’
কবির ফকির অভিযাগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ইউনিক কাউন্টারটি আমাদের পক্ষের লোকজনের। শনিবার দুপুরে সামসুল চৌকিদার দুই থেকে আড়াই শতাধিক লোক নিয়ে কাউন্টার দখল নিতে গেলে আমাদের লোকজন বাধা দেওয়ায় আট জনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছেন। তাদের উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সোয়েব ইসলাম হেলাল বলেন, ‘আমার ভাই বেল্লাল চৌকিদার কোনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে রাহাত ফকির ও ফরহাদ ফকিরসহ তার সহযোগীরা হামলা করে আট লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে আমার ভাইকে কুপিয়ে জখম করেছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা রাশেদ মাহমুদ বলেন, ‘আহত সাত জনকে চিকিৎসা দিয়ে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। এখনও কোনও পক্ষ থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’