মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলা, বিএনপির চার নেতাকর্মী আহত
- যশোর প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৬:১৭ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সেচের পানি নিয়ে বিরোধে যশোরের পল্লিতে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হামলায় আহত হয়েছেন বিএনপির সমর্থক চার জন।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যশোর সদরের আব্দুলপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন হৈবতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহসভাপতি হুমায়ুন কবির রাজু (৪৪), ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সম্পাদক শামীম (৩৬), বিএনপি কর্মী জিয়া (৩৫) এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের কোষাধ্যক্ষ পাপ্পু।
এ ছাড়া মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত শফিকুল নামে একজন নিজেকে আহত দাবি করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলে হৈবতপুরের বাসিন্দাদের তোপের মুখে পড়েন। হাসপাতাল চত্বরেই তাকে মারপিট করে গুরুতর আহত করা হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় রেফার করা হয়েছে।
আহতদের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামের বাসিন্দাদের চাষের জমি রয়েছে পার্শ্ববর্তী হৈবতপুর ইউনিয়নের বড় হৈবতপুর গ্রামের মাঠে। চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান আনিছুর রহমানেরও জমি রয়েছে ওই মাঠে। বিগত সরকারের আমলে আনিছুর রহমান হৈবতপুর গ্রামের মানুষের জমির আইল কেটে জোর করে নিজের জমিতে পানি প্রবেশ করাতেন। সে সময় কেউ এ ব্যাপারে কিছু বলার সাহস দেখাননি। আজও তিনি তিনি একই কায়দায় অন্যের জমির আইল কেটে নিজের জমিতে সেচের ব্যবস্থা করছিলেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হৈবতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সহসভাপতি হুমায়ুন কবির রাজু বলেন, ‘আমার এলাকার কয়েকজন কৃষক গতকাল সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে তাদের ধানের জমিতে সেচ দেন। কিন্তু আব্দুলপুর এলাকার বাসিন্দা আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সন্ত্রাসী চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আনিছুর রহমান, সন্ত্রাসী তৌহিদুরসহ কয়েকজন সেই সব জমির আইল কেটে পানি বের করে দেয়। মঙ্গলবার সকালে এই বিষয়ে জানতে আমরা আব্দুলপুরে যাই। তখন তারা স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। মেম্বার আনিছ নিজেই দা দিয়ে আমার মাথায় দুইটা কোপ দেয়।’
এ নিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মিঠুন কুমার দে জানান, তাদের (আহতদের) শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। একজনের মাথায় বেশ কয়েকটি ক্ষত হয়েছে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।
হৈবতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে এই আনিছ মেম্বার যা ইচ্ছে তা করেছেন। গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট। তার নেতৃত্বে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, হৈবতপুরের মাঠ থেকে সাধারণ মানুষের ফসল তুলে নিয়ে যাওয়া, অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবিসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল হৈবতপুরবাসী। থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে গেছে। সরকার পতনের পর থেকে আনিছ চক্র আত্মগোপন করে। কিন্তু সম্প্রতি ফের প্রকাশ্যে এসে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।’
এ নিয়ে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক কাজী বাবুল বলেন, ‘জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কমবেশি পাঁচজন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের দেইটি টিম পাঠানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে এই আনিছ মেম্বারের নেতৃত্বে এক তরুণ ও তরুণীকে প্রকাশ্যে জুতাপেটা এবং মারপিট করা হয়। সেই সময় তিনি ব্যাপক সমালোচিত হন। ওই মেম্বারের পা ধরে ক্ষমা চেয়েও ছাড় পায়নি তারা। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। যা নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। আনিছের আটকের দাবিতে তখন মিছিল, মানববন্ধনও হয়। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে তিনি পার পেয়ে যান।