চলন্ত বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি: এসপি


15Feb Naeem/sp-ddw.jpg

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতির সময় কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান। তিনি বলেছেন, যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।  

এসপি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কয়েকজন যাত্রীর কাছে বিষয়গুলো শুনেছি। সেখানে প্রাথমিকভাবে যে বিষয়টি এসেছে, এখানে কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। এখানে নারীদের কাছ থেকে কিছু স্বর্ণ ও রূপা লুণ্ঠিত হয়েছে। এই লুণ্ঠন করার সময় ডাকাতরা নাকফুল ও নাকের দুল যখন নিচ্ছিল, তখন হয়তো তাদের সঙ্গে (নারী) টাচে গিয়েছে। একটা পর্যায়ে গিয়ে তাদের সঙ্গে গিয়ে এই কাজগুলো করতে হয়েছে। সেটুকু আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। প্রাথমিকভাবে কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি, এটা যৌন হয়রানির পর্যায়ে বলা যেতে পারে।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আলোচিত এই বাস ডাকাতির একটি অংশ ছিল নারী। নারীদেরকে ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির এ রকম একটি বিষয় এখানে এসেছে। আমরা এখানে নারী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং যারা যাত্রী ছিল তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমরা প্রাথমিকভাবে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছি। এগুলো আমাদের আন্ডার ট্রায়ালে আছে। বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করছি। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। খুব দ্রুতই আমরা বিষয়গুলো পরিষ্কার করতে সক্ষম হবো।’

তিনি বলেন, ‘আন্তঃজেলা বাস ডাকাতদলের সক্রিয় সদস্যরা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। ঘটনাটি জানার পরপরই ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে আমার যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার এবং গোয়েন্দা টিম আছে- সেই গোয়েন্দা টিমকে নিয়ে আমার কার্যক্রম শুরু করি। বাসটিতে যাত্রীদের মোবাইল, টাকা ও স্বর্ণ লুণ্ঠিত হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ ইতোমধ্যেই মহাসড়কে ডাকাতদলের সক্রিয় তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছি। এ সময় লুণ্ঠনকৃত তিনটি মোবাইল, ব্যবহৃত একটি অস্ত্র ও ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তারা যুক্ত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। এ ঘটনার সময় আরও কয়েকজন তাদের সঙ্গে ছিল। আশা করছি খুব দ্রুত এ ঘটনার পুরো রহস্য উদঘাটন করতে আমরা সক্ষম হবো।’

এ ঘটনায় গ্রেফতাররা হলেন- মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের বদর উদ্দিন শেখের ছেলে শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিত (২৯), শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ইসমাইল মোল্লার ছেলে সবুজ (৩০) ও ঢাকার সাভারের টান গেন্ডা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে শরীফুজ্জামান (২৮)।

এর মধ্যে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় একটি ও ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানায় একটি বাস ডাকাতি মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। শুক্রবার রাতে ঢাকার সাভারের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ।

এর আগে, শুক্রবার সকালে বাসের যাত্রী ওমর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৮ থেকে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এদিকে, দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে মির্জাপুর থানার এএসআই আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে মির্জাপুর থানা থেকে টাঙ্গাইলের পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। এ ছাড়াও নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। পরে তাকে জেলা পুলিশ সদরদফতরে সংযুক্ত হতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহনের একটি (ময়মনসিংহ-ব-১১-০০৬১) বাস ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজশাহীর নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় বাসটিতে ৩০ থেকে ৩৫ যাত্রী ছিলেন। পরে রাত ১২টার দিকে হেমায়েতপুর বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে ও হেমায়েতপুর থেকে আরও ১০ থেকে ১২ যাত্রী নিয়ে বাসটি পুনরায় রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা করে। বাসটি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা বাইপাসে পৌঁছালে চা বিরতির জন্য থামে। সেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট চা বিরতির সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে আরও তিন থেকে চার জন নতুন যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা করে বাসটি।

বাসটি ওই দিন রাত দেড়টার দিকে কালিয়াকৈরের হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রমের সময় বাসে থানা ৮ থেকে ৯ জন যাত্রীবেশে ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দেখিয়ে জিম্মি করে ফেলে। এ সময় বাসচালকের গলায় ধারালো চাকু ধরে পেছনের সিটে নিয়ে বসায়। তাদের মধ্যে একজন সদস্য বাসটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে রওনা হয়। পরে মির্জাপুর উপজেলার সোহাগপাড়া সাকিনের ফুটওভার ব্রিজের কাছে পৌঁছে ডাকাতরা লুণ্ঠন শুরু করে।

এ সময় যাত্রীদের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও রূপাসহ সব মালামাল ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা গাড়িটি দেলদুয়ার উপজেলার নাটিয়াপাড়ায় গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করে। এভাবেই প্রায় তিন ঘণ্টা যাত্রীদের মালামাল লুণ্ঠন ও নারীদের শ্লীলতাহানির পর আশুলিয়ার নন্দন পার্ক এলাকায় নেমে যায়। পরে চালক গাড়ি নিয়ে চন্দ্রা মোড়ে গেলে গাড়িতে থাকা যাত্রীরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে জানালে কিছুক্ষণের মধ্যে টহল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। টহল পুলিশ মির্জাপুর থানায় বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দেন। তারা মির্জাপুর থানায় সেবা না পেয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় গিয়ে জানান। বিষয়টি ওই এলাকায় সংগঠিত না হওয়ায় পুলিশ চালক, বাসের সুপারভাইজার ও সহকারীকে আটক করে ৫৪ ধারায় আদালতে প্রেরণ করে। পরে তারা ওই দিনই জামিনে মুক্তি পান।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×