বৈষম্যের শিকার সিলেটবাসী, ক্ষুব্ধ সাবেক মেয়র আরিফ
- সিলেট প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৮:২০ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিএনপির উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের ন্যায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। উন্নয়নের দিক থেকে সিলেটবাসীর কোনো পরিবর্তন হয়নি।’
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সিলেটের কুমারপাড়াস্থ নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে লালাবাজার থেকে হুমায়ুন রশিদ চত্বর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্থকরনের দাবি তুলে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আম্বরখানা-বিমানবন্দর মহাসড়কে চার লেন-ছয় লেনের কথা বলা হলেও সিলেটবাসীর স্বপ্নের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়নি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের বাহানা করে পিছিয়ে ফেলা হচ্ছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমল থেকে এখন পর্যন্ত ১৭ বছরেও তাদের যাছাই-বাচাই শেষ হচ্ছে না। বাংলাদেশের সব মহাসড়কে ইতোমধ্যে কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আমার অনুরোধ থাকবে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন। ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়কে ৩০টি ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) প্রস্তাব রয়েছে তারমধ্যে মন্ত্রণালয়ে ৭টি প্রস্তাব প্রেরণ করা হলে ৩টি’র চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তাহলে আগামী আরও ৫ থেকে ৭ বছরেও এই প্রস্তাব আলোর মুখ দেখবে না। ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের আওতাবহির্ভূত ২৩ কিলোমিটার সড়কের প্রসস্থ করণে এই বৈষম্য কেন? ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের আওতাবহির্ভূত ২৩ কিলোমিটার সড়কে চারলেনের উন্নীত করণের প্রকল্পটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। ওই প্রকল্পটিতে কোনো ভূমি অধিকরণের প্রয়োজন পড়বে না।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ নিয়ে গড়িমসির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রদানে বিলম্বের কারণে প্রকল্পগুলো আরেকধাপ পেছনে রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের ছাড়পত্র বিলম্বের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যার ফলে ব্যয় বেড়ে চলছে। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর সড়কে লাক্কাতুরা হইতে বিমানবন্দর পর্যন্ত চারলেনের উন্নীতকরণ পকল্পের ছাড়পত্র এখনও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রক্রিয়াধীন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রদান এবং সহজীকরণ করার জন্য আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।’
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা নিয়ে সাবেক মেয়র বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজন বিদ্যমান সড়কগুলো পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণের বাজেট প্রদান ও সমন্নয় সাধন। ভূমিকম্প ও বন্যা কবলিত এলাকায় যখনি কবলিত হয় তখনি আমরা নড়া-চড়া করে বসি কিন্তু এর আগে কেউ কোনো কথা বলে না। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে প্রতি বছর প্রায় একাধিক বার বন্যা দেখা দেয়। আগামী বর্ষা মৌসুমেও বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে। ২০২৪ সালের জুন ও জুলাই মাসে বন্যায় সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৯টি সড়কের প্রায় ৫৫ কিলোমিটার সড়ক বন্যায় নিমোজ্জিত ছিল। বন্যায় কবলিত এই সড়কগুলো টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কংকিট দিয়ে তৈরি করার জন্য একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে কিন্তু এই প্রস্তাব আলোর মুখ দেখেনি। সিলেটের জন্য জনবলের অযুহাত দেখিয়ে সঙ্কট নিরসনের নামে কাজ আটকে রাখা হয়। সিলেটের জাফলং-ভোলাগঞ্জ-তামাবিল পর্যন্ত একটি পর্যটন সড়ক করা হলে তা বিপুল পরিমাণে পর্যটক টানবে কিন্তু এই বিষয়ে তারা আজ পর্যন্ত কোনো প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি।’
বিমানের বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে তুলে ধরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিমানের ফ্লাইটগুলোর ক্ষেত্রে সব প্রকার ছাড় থাকলেও সিলেটিদের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বিমান কর্তৃপক্ষের নজর ভিন্ন। বিমান কর্তৃপক্ষরা মনে করেন সিলেটিরা তাদের কাছে জিম্মি এবং ব্যাপক হারে সিলেটিদের কাছ থেকে টিকেটের দাম নেওয়া হয়। যেভাবে সরকারি ও বেসরকারি বিমান কর্তৃপক্ষরা চাইবে সেইভাবে সিলেটিদের ব্যবহার করা যাবে।’
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইট সিলেট থেকে ঢাকা ১৯ হাজার ৪০ টাকা এবং ঢাকা থেকে সিলেট ২১ হাজার ৮৬০ টাকা। আবার একই দিনে সিলেট থেকে ঢাকা নভোএয়ারের ফ্লাইটের টিকেটের দাম ২১ হাজার ৬শ’ ৫০ টাকা। এখন প্রায় সরকারি ও বেসরকারি বিমানের ফ্লাইটের দাম ২১ হাজার, ২০ হাজার, ১১ হাজার, ৮ হাজার কখনো কখনো ৯ ও ১০ হাজার প্রতিদিন উঠা-নামা করে।
বিমান কর্তৃপক্ষের বৈষম্যের বিষয় তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, ‘সিলেট থেকে ঢাকার ফ্লাইটের টিকেটের বিষয়ে অন্য জেলাগুলোর থেকে দাম বেশি আদায় করা হয়, সিলেটিদের প্রতি এই বৈষম্য কেন? সরকারি ও বেসরকারি বিমানের ফ্লাইটের দাম নিয়ে সবচেয়ে বৈষম্য করতেছে ইউএস বাংলা, নভোএয়ারসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলো।’
‘অনতিবিলম্বে যদি এই সমস্যার সুরাহা না করা হয় তাহলে সিলেটবাসী কঠোর আন্দোলন বা কর্মসূচির ডাক দিবে। অন্তর্বর্তী সরকার যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেন তাহলে বুঝবো সিলেটবাসীর সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ করছেন।’