পছন্দের ইমামকে না রাখায় জাতীয় পতাকার খুঁটিতে জুতা
- কুমিল্লা প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৬:৩৯ পিএম, ০৭ মার্চ ২০২৫

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শাখার মসজিদে পছন্দের ইমামকে না রাখায় জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডে (খুঁটি) জুতা ঝুলিয়ে দিয়েছে নানা অভিযোগে অব্যাহতি পাওয়া ইমাম মারুফ বিল্লার অনুসারীরা। শুক্রবার (৭ মার্চ) জুমার নামাজের পর কলেজের ডিগ্রি শাখার প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার ২৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ভাইরাল হয়। জুমার নামাজের আগে থেকে জুতা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনা পর্যন্ত পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক লোকজন ক্যাম্পাসজুড়ে অবস্থান করছিলেন।
জানা গেছে, জুমার নামাজের খুতবার আগের মসজিদের মিম্বরে মুসল্লিদের উদ্দেশে কথা বলেন কলেজ এলাকার স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন।
পূর্বপরিস্থিতি যাতে আর না হয় আহ্বান করে তারা বলেন, ‘ভিক্টোরিয়া একটি স্বনামধন্য কলেজ। স্থানীয়দের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরোধ কখনও কাম্য নয়। কলেজ মসজিদের অব্যাহতি পাওয়া ইমাম মারুফ বিল্লাহকে সসম্মানে বিদায় করার পাশাপাশি বর্তমান ইমামকে বাদ দিয়ে নতুন ইমাম নিয়োগ দিতে হবে। ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে এমন একজনকে নিয়োগ দিতে হবে যাকে কলেজ ও মসজিদ এলাকার কেউ না চেনে। এ বিষয়ে আমরা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবো।’
এই কথা মানেনি অব্যাহতি পাওয়া ইমাম মারুফ বিল্লার অনুসারীদের একাংশ। খুতবা চলাকালে তারা বের হয়ে যান মসজিদ থেকে। নামাজ শেষ হতেই কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থাকা জাতীয় পতাকার তিনটি স্ট্যান্ডের মধ্যে মাঝের স্ট্যান্ডে বিভিন্ন অশ্লীল স্লোগান দিয়ে জুতা ঝুলিয়ে দেয় ৮-১০ জন যুবকের একটি দল।
কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাঈদ আহমেদ বলেন, ‘এ কেমন কাজ! ইমাম গেলে ইমাম আসবে। দোষ করলে মানুষ করছে। জাতীয় পতাকার অবমাননা করলো কেন? কলেজ প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’
অভিযুক্ত ইমাম মারুফ বিল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কলেজ প্রশাসন আমাকে অব্যাহতি দিয়েছে। আমি কলেজ থেকে চলে এসেছি। এখন কী ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল বাসার ভূঁঞা বলেন, ‘জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডে জুতা উত্তোলন, রাষ্ট্রদ্রোহী কাজের সমান। এই কাজ কখনোই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি। তদন্তসাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি কলেজের ডিগ্রি শাখার মসজিদে তাবলিগের বিবদমান দুই পক্ষ মাওলানা সাদ ও জুবায়েরের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জেরে গত ২০ জানুয়ারি তাবলিগের সাপ্তাহিক তালিম সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা করেন কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল বাসার ভূঁঞা। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ দিনের মতবিরোধে ২১ জানুয়ারি বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করেন ইমাম মারুফ বিল্লার অনুসারীরা। এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ইমাম মো. মারুফ বিল্লাহকে নানান অভিযোগ তুলে অব্যাহতি দেয় কলেজ প্রশাসন। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ইমামকে চাকরিচ্যুত করার পর থেকেই কলেজে সংঘর্ষ শুরু হয়।
প্রতি শুক্রবার নামাজের আগে ইমামকে বহালের দাবি করে আসছে স্থানীয় একটি পক্ষ। প্রতি শুক্রবারই শিক্ষকদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে স্থানীয়দের ও কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অংশের। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কলেজের নামাজ শুরুর আগেই স্থানীয় কিশোর ও যুবকরা কলেজের অধ্যক্ষের ওপর হামলা করে। এ সময় তারা অধ্যক্ষের গায়ে আঘাত করে। পার্শ্ববর্তী নজরুল হলের শিক্ষার্থীরা পাশে দাঁড়াতে আসলে তাদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয়রা। এ সময় পুলিশ আসলেও স্থানীয়দের হামলায় প্রথমে পিছু হটে পরে কলেজে ঢুকে।