খুলনায় আ’লীগের পর খাল দখলে মরিয়া বিএনপির দু’পক্ষ
- খুলনা প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০১:৩১ এম, ০৮ মার্চ ২০২৫

খুলনার কয়রায় ৩০ একর পবনা খালের দখলে নিতে বিএনপির দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। কয়েক দিন ধরে খাল এলাকায় মহড়ার পর আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। সেখানে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
২০০৯ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঁধ ভেঙে শাকবাড়িয়া নদীর পানিতে প্লাবিত হয় এলাকা। সে সময় খালের দুই পাড়ের ফসলি জমিও ভেঙে যায়। এতে ৯ একর আয়তনের সরকারি খাল ৩০ একরে পরিণত হয়। পরবর্তী সময়ে খালের ইজারাদাররা খাসজমির সঙ্গে রেকর্ডীয় জমিও ভোগদখল করতে থাকেন। জমির অধিকার হারান কৃষকরা। চলতে থাকে দখল-পাল্টা দখল। ভূমি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
খাল-সংলগ্ন পূর্ব মঠবাড়ি গ্রামের রণজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘খালে আমাদের ৬ বিঘা জমি আছে। ১৫ বছর ধরে দখল পাচ্ছি না। আগের ইজারাদার পালিয়ে যাবার পর মনে করেছিলাম জমি দখলে নেব। কিন্তু এখন খালের পাড়ে দুই দলের মহড়া দেখে সাহস পাচ্ছি না।’
একই গ্রামের খুকু রানী মণ্ডল বলেন, ‘ভাঙনে জমি হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থা আমাগের। জমি বাবদ কিছু টাকা-পয়সা পালিও খাইয়ে পইরে বাঁচতি পারতাম। কিন্তু যারা খালে মাছ চাষ করতি আসে, তারা সরকারি খালের সাথে আমাগের জমিও দখল করে। তাগের কাছে টাকা চাতি সাহসে কুলায় না।’
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশ কিছুদিন শ্রমিক লীগ নেতা আল আমীন খালটি ভোগদখল করেছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর খালের দখল ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। এরপর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ বিশ্বাস খালের নিয়ন্ত্রণ নেন। কিছুদিন পর তাঁকে হটিয়ে যুবদল কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান হেলাল খাল দখল করেন। পরে প্রশাসন দুই পক্ষকে খাল থেকে উচ্ছেদের জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দিলে দুই মাস সেখানে কাউকে দেখা যায়নি।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে যুবদল নেতা হেলাল উদ্দীন ২০-২৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে খাল পাড়ে মহড়া দিয়ে চলে যান। ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে তিনি ফের খালটি দখল করেন। একই দিন বিকেলে বিএনপি নেতা আবু সাঈদ বিশ্বাসের লোকজন খাল পাড়ে গিয়ে হেলালের লোকজনকে সরিয়ে দেন। বর্তমানে খালে দুই পক্ষের কেউ না থাকলেও আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। মামলায় একে অপরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, লুটপাট ও মারধরের অভিযোগ করেছেন।
মঠবাড়ি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মওলা বকস বলেন, ওই খালে সরকারি খাস খতিয়ানের জমি আছে ৯ একর। নদী ভাঙনের ফলে ২০ একরের বেশি রেকর্ডীয় জমি ওই খালে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার ভাগনে খালটি দখলে রেখে মাছ চাষ করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পাশাপাশি জমি মালিকদের টাকা না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তিনি চলে যাওয়ার পর এখন বিএনপির দুই পক্ষ খালটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এ বিষয়ে যুবদল কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান হেলাল বলেন, খালের আগের দখলদার পালিয়ে যাওয়ার পর জমি মালিকদের কাছ থেকে লিখিত চুক্তি করে মাছ চাষ শুরু করেছিলাম। কিছুদিন পর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ বিশ্বাস আমার লোকজনকে তাড়িয়ে দিয়ে নিজে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
বিএনপি নেতা আবু সাঈদ বিশ্বাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, খালের জমির মালিকরা চান আমি সেখানে মাছ চাষ করি। একটি পক্ষ ভুয়া মালিকের সঙ্গে চুক্তিপত্র করে খাল দখলে নিতে চাইছে। আমি তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করছি।
কয়রা থানার ওসি এমদাদুল হক বলেন, দুই পক্ষকে নিবৃত্ত থাকতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় এমন কর্মকাণ্ডে কেউ জড়িত থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।