সাংবাদিকের দোকান দখলে নিয়ে বিএনপির কার্যালয়
- বরিশাল প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১০:০৫ পিএম, ১০ মার্চ ২০২৫

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছয় বছর দখলে থাকার পর গত ৫ আগস্ট মুক্ত হয়ে এবার উপজেলা বিএনপির দখলের কবলে পড়েছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার এক সাংবাদিকের দোকানঘর। সম্প্রতি উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়ন বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় করার অজুহাতে দুই দফা ব্যানার টানিয়ে ওই দোকানটি দখলে রেখেছেন। এর নেতৃত্বে রয়েছেন উজিরপুর উপজেলা যুবদলের দুই যুগ্ম আহ্বায়ক জালিস মাহমুদ মৃধা ও রুহুল কুদ্দুস হাওলাদার।
দোকানঘরটির মালিক উজিরপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং প্রতিদিনের বাংলাদেশ ও স্থানীয় দৈনিক কীর্তনখোলা পত্রিকার প্রতিনিধি মাহফুজুর রহমান মাসুম।
তিনি বলেন, ‘উজিরপুরের শিকারপুর বন্দরের চান্দিনা ভিটায় ৪ শতাংশ জমি ইজারা নিয়ে ১৯৫০ সাল থেকে দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান। ২০১৫ সালে বাবার মৃত্যুর পর দুই ভাই দোকানটির মালিক হই। ২০১৮ সালে দোকানের সংস্কারকাজ করাতে গেলে বাধা দেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের কার্যালয় করার অজুহাতে দোকানে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন তারা। এই কাজের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন উজিরপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন ও শিকারপুর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন মৃধাসহ তাদের সহযোগীরা। এ নিয়ে দফায় দফায় সালিশ বৈঠক হলেও কোনোভাবেই দোকানঘর ছাড়েননি তারা। ৫ আগস্টের পর ওই দোকানঘর নিজেদের আয়ত্তে নিই আমরা।’
মাসুম আরও বলেন, ‘সম্প্রতি যুবদলের দুই নেতা জালিস মাহমুদ ও রুহুল কুদ্দুস দোকানটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বিএনপির নেতাদের জানালে তারা বৈঠকে বসে সমাধানের চেষ্টা করেন। এ সময় রুহুল কুদ্দুসকে ১০ হাজার টাকা দিতে বলেন সালিশদাররা। তাদের কথামতো ১০ হাজার টাকা দিলেও দখল ছাড়েননি কুদ্দুস ও জালিস। পরবর্তী জালিস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির লাইসেন্স পেতে দোকানটি নেন। তখন দোকান ছেড়ে দিতে বললে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও উজিরপুর উপজেলার আহ্বায়ক এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর ছবি সংবলিত শিকারপুর ইউনিয়ন বিএনপির স্থায়ী কার্যালয় নামে ব্যানার টানিয়ে দেন। বিষয়টি সান্টুকে জানালে তিনি ব্যানার নামানোর নির্দেশ দেন। তখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সংবলিত আরেকটি ব্যানার নিয়ে স্থায়ী দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন জালিস ও রুহুল। এমনকি দোকানের ধারেকাছে গেলে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।’
সাংবাদিক মাসুম আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট দোকানঘরটি নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে পরিষ্কার করি। দীর্ঘ দিন পড়ে থাকায় সংস্কারের প্রয়োজন হয়। সংস্কারকাজের মধ্যে জানুয়ারি মাসে আবারও দখলের কবলে পড়ে। আমরা আমাদের দোকানটি ফেরত চাই। এ জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব হুমায়ুন খান বলেন, ‘ওই দোকানটি সাংবাদিক মাসুমের। এটি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী দখল করেছিল। এখন বিএনপির কিছু নেতার নজরে পড়েছে। তারা সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছেন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত উপজেলা বিএনপি দেয়নি। দলকে সামনে রেখে যারা এ ধরনের অপরাধ করবে তাদের দায় দল নেবে না। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানানোর পাশাপাশি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টুকে জানানো হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলী সুজা বলেন, ‘সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান জমির ডিসিআর বলে বৈধ মালিক। তিনি একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যুবদল নেতা জালিস মাহমুদ মৃধা ও রুহুল কুদ্দুস হাওলাদার জানান, উজিরপুর পৌর ও শিকারপুর ইউনিয়ন বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় করতে দোকানটিতে সাইনবোর্ড টানিয়েছেন। এ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।