আ. লীগের দখলে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি, চলছে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের আয়োজন
- চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১০:৫৮ পিএম, ১০ মার্চ ২০২৫

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির অরাজনৈতিক শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন কার্যক্রম আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। আগামী ১৪ মার্চ কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে নির্বাচনের আয়োজন। সোমবার (১০ মার্চ) জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিল্প উপদেষ্টা বরাবর নির্বাচন বাতিল ও পুনর্বিবেচনার জন্য একটি আবেদনপত্র পাঠিয়েছে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক।
আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, ‘কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন আগামী ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এই নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে এবং বাইরে নানা অনিয়ম, স্বৈরাচারী মানসিকতা ও গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৬ বছরে প্রতিষ্ঠানটিতে স্বৈরাচারী শাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। যারা স্বৈরাচারী সরকারকে আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করেছে। কেরুর পণ্য চোরাচালানে জড়িত ছিল এবং প্রতিষ্ঠানে স্বৈরাচারী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছে। তারাই আজ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছে।’
কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গোটা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডকে গ্রাস করে ফেলেছে আলী আজগার টগর, আলী মনছুর বাবু ও তার নিকটাত্মীয়রা। আলী আজগার চুয়াডাঙ্গা- ২ আসনের কথিত সংসদ সদস্য। আলী মনছুর তারই ভাই। তিনি দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। গত ১৬ বছর যে ব্যবস্থাপনা পরিচালকই এ প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনে এসেছেন তাকেই ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে অপকর্ম করেছেন তারা। ৫ আগস্টের পর আ.লীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে গেলেও কেরুতে আছেন বহাল তবিয়তে। কেরু ডিস্টিলারি এবং দেশের ১৩টি মদ বিক্রির ওয়্যার হাউজে আলী আজগার টগরের নিয়োগ দেয়া শ্রমিক ও কর্মচারী এখনো স্বপদেই আছে।
কেরু শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এবং হত্যা মামলার আসামি মাসুদুর রহমান মাসুদ কেরুকে ‘টাকা উৎপাদনের মেশিন’ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক। তার ছেলে সৌমিক হাসান রূপমকে ক্ষমতাবলে চাকরি দিয়ে মদ বিক্রির ওয়্যার হাউজ ইনচার্জ হিসেবে রেখেছিলেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির উৎপাদন প্রায় ১০ ঘণ্টা বন্ধ করে কর্মকর্তাদের জিম্মি রেখে রূপমের বদলি বাতিলের চেষ্টা করে তার অনুসারী শ্রমিকরা।
কেরু শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনে এবার সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মনিরুল ইসলাম প্রিন্স। তিনি আলী আজগার টগরের ছত্রছায়ায় অবৈধ স্বর্ণ চোরাচালান ও অস্ত্র ব্যবসা করতেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের অন্যতম ডোনার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম ক্যাডার তৈয়ব আলী ইউনিয়নের নির্বাচনে সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আরেকজন ফিরোজ আহমেদ সবুজ সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি সাবেক সভাপতি আজিজুল ইসলামের ছেলে। গত কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজ সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এদিকে দর্শনা কেরু শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) আব্দুছ ছাত্তার বলেন, ‘কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর থেকে যে চিঠি আমরা পেয়েছি তার লিখিত জবাব দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’
কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের সহকারী পরিচালক তৌফিক হোসেন জানান, আমাদের পাঠানো চিঠির প্রেক্ষিতে তারা নির্বাচন বন্ধ করেনি। তারা নিয়মই মানছেন না। তবে শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর বিস্তারিত জানিয়েছি। দেখা যাক কি হয়।’