জেল সুপারের মানবিকতায় কারাগার থেকে নিজ দেশে ফিরে গেলেন নেপালী যুবক


March25 Naeem/Pabna Nepali Jubok Ram Rishi Hostantor Pic-01.jpg

সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছিলেন নেপালী যুবক রাম রিশি চৌধুরী (২৩)। পাবনার ঈশ্বরদী থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। এরপর পাবনা কারাগারে কাটতে থাকে দিন মাস বছর। বিষয়টি নজরে আসে জেল সুপার ওমর ফারুকের। অবশেষে তাঁর উদ্যোগে এক বছর আট মাস পঁচিশ দিন পর আদালতের মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরে যান নেপালী যুবক।

রাম রিশি চৌধুরী নেপালের সরলাহি জেলার খার কাটোল গ্রামের মি. রামজি চৌধুরী ও পুন্ডি কুমারি চৌধুরীর ছেলে।

পাবনা জেলা কারাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ঘুরতে ঘুরতে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিলেন রাম রিশি। এরপর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পাবনার ঈশ্বরদীতে গিয়ে পৌঁছান তিনি। এক পর্যায়ে ২০২৩ সালের ১১ জুন ঈশ্বরদী থানা পুলিশ অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে পাবনা জেলা কারাগারে পাঠায়। সেখানেই কাটছিল দিন মাস বছর।

পাবনা জেল সুপার ওমর ফারুক বলেন, আটকের পর প্রথমে তিনি নিজেকে ভারতীয় দাবি করেছিলেন। পরে জানায় তিনি নেপালী। তিনি মানসিকভাবে বেশ অস্বাভাবিক ছিলেন। চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ্য করা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করি। ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ এ নেপালী যুবকের কক্তব্যসহ একটি আবেদন পাঠাই। আইনজীবির মাধ্যমে নথি উপস্থাপনের পর যুবক নেপালী কি না তা যাচাই করার জন্য একজন দোভাষীর প্রয়োজন বলে জানান বিচারক।

জেল সুপার বলেন, তখন আমি ঢাকাস্থ নেপালী দূতাবাসে যোগাযোগ করি। সেখান থেকে রিয়া ছেত্রী নামের একজনকে দোভাষী হিসেবে আদালতে হাজিরার তারিখে পাঠায়। তার বয়ানে ও স্বাক্ষ্য প্রমাণ শেষে রাম রিশিকে নেপালী হিসেবে চিহ্নিত করেন আদালত। ২০২৫ সালের ২৩ জানুয়ারি আদালতের বিচারক মোস্তাফিজুর রহমান আদেশ দেন, ‘যেহেতু সে ভারতীয় নাগরিক নয়। সেহেতু অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে তাকে সাজা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই সংশ্লিষ্ট জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বন্দিকে নেপালে প্রেরণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।’

এরপর সরকারি আদেশ, আদালতের অনুমোদন সহ আইনগত বিষয় শেষ করে গত ৬ মার্চ’২৫ পাবনা কারাগার থেকে নেপালী দূতাবাসের সেকেণ্ড সেক্রেটারী ইয়োজানা বামজান এর কাছে রাম রিশি চৌধুরীকে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় জেল সুপার ওমর ফারুক, জেলার ইউনুস জামান সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দূতাবাসের মাধ্যমে তিনি নিজ দেশে পরিবারের কাছে ফিরে যান। রাম রিশি পাবনা কারাগারে ছিলেন ১ বছর ৮ মাস ২৫ দিন।

এক প্রতিক্রিয়ায় জেল সুপার ওমর ফারুক বলেন, ‘এমন কাজ করতে পেরে নিজের কাছে অনেক শান্তি লাগে। মানষিকভাবে তৃপ্তি পাই। এটা আমার কাছে নতুন কোনো ঘটনা নয়। এনিয়ে আমার কাছে এটা ২৩তম প্রত্যাবাসন কাজ। এর আগে নেপালী ও ভারতীয় মিলিয়ে মোট ২২টি প্রত্যাবাসন করেছি। যতদিন চাকরি আছে ততদিন এমন কাজ করে যেতে চাই।'

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×