মামলা থেকে নাম সরাতে ঘুষ দাবি পুলিশ কর্মকর্তার
- রংপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৭:৩৮ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২৫

রংপুর মহানগর পুলিশের এক উপ-কমিশনারের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় ওই ব্যবসায়ী অভিযোগ দিতে তার ম্যানেজারকে থানায় পাঠালে তাকে সেখানেই বেধড়ক পেটান পুলিশের ওই কর্মকর্তা। একপর্যায়ে তাকে গুলি করতে সহকর্মীর কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে নগরীর কোতোয়ালি থানায় এ ঘটনা ঘটেছে। পরে এ ঘটনায় পুলিশ মামলা নিলেও অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত মোহাম্মদ শিবলী কায়সার রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার। মামলার বাদীকে মারধর ও ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পুলিশের এই কর্মকর্তাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মামলা থেকে বাঁচাতে অমিত বণিক নামে আরেক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী কায়সার। এ ঘটনায় শিবলী কায়সার, অমিত বণিক ও কামরুল ভরসার নামে মামলা করতে ম্যানেজার পলাশ হাসানকে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে কোতোয়ালি থানায় পাঠান লিপি।
পুলিশ ও অভিযোগকারী সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ নভেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মামলায় আসামি হন লিপি খান ভরসা। এ মামলা থেকে নাম বাদ দিয়ে তাকে সুরক্ষা দিতে মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিকের মাধ্যমে লিপি খানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় গত ১১ মার্চ শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তর, মহানগর পুলিশ কমিশনার ও সেনাবাহিনীর কাছে লিপি খান লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অভিযুক্ত অমিত বণিককে কোতোয়ালি থানায় ডেকে নেয় পুলিশ।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করতে লিপি খান ভরসা তার ম্যানেজার পলাশ হাসানকে কোতোয়ালি থানায় পাঠান। খবর পেয়ে বিকেল ৫টার দিকে থানায় আসেন উপপুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সার। তিনি সেখানে এসেই পলাশ হাসানের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে তাকে গুলি করতে কর্তব্যরত এক কনস্টেবলের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনার সময় থানায় উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর ম্যানেজার পলাশ হাসানের স মোবাইলে কথা হয় । তিনি মারধরের কথা স্বীকার করলেও ঘটনার বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসা জানান, ম্যানেজার পলাশকে থানায় পাঠানোর পর থেকে তার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করতে পারেননি। বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে পুলিশ পলাশকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়েছে। মারধরের কারণে তার শরীরে ব্যথা আছে।
এদিকে কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান ঘটনাটি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগকারীর করা মামলায় অমিত বণিক নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
তবে ওই সময় থানায় উপস্থিত থাকা পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) হাবিবুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, ‘কে বা কারা তাকে তথ্য দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজি মামলা হতে যাচ্ছে, সেখানে তার নাম আছে। এটা শুনে শিবলী পাঁচটা বা পৌনে পাঁচটার দিকে কোতোয়ালি থানায় গিয়েছিল। এতে তিনি উত্তেজিত হন এবং মামলার বাদীর সঙ্গে তার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বেশি উত্তেজিত হয়ে কর্তব্যরত সেন্ট্রির (থানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল) রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন উপস্থিত সবাই তাকে নিবৃত্ত করেন।’
তিনি বলেন, ‘থানার ভিতরে উপপুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সারের কর্মকাণ্ডে একটি জিডি করা হয়েছে, ভবিষ্যতে যদি দরকার হয়। এছাড়া পুরো ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
এদিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া অমিত বণিককে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তার শ্বশুর চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, ‘মামলার গ্রাউন্ডে চাঁদাবাজি আনা হয়েছে। কিন্তু এখানে তো ডিসি ক্রাইমের নাম আছে, তার নামটা তো এলো না। অরিজিনাল ফ্যাক্টটা তো উনি।’
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী কায়সার বলেন, ‘আমি কোনো বিষয়ে কথা বলতে চাই না। গতকাল সকালে প্রত্যাহার হয়েছি, এখন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (ক্রাইম) নেই।’ কিন্তু থানায় কেন গিয়েছিলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কোনো বিষয়ে কথা বলতে চাই না।’
এ বিষয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, ‘যা হয়েছিল ওখানে এটা লুকানোর বা গোপন করার কিছু নেই। ওখানে সিনিয়র অফিসার হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। আমি তাকে রিপোর্ট দিতে বলেছি। বিষয়টি তদন্তাধীন।’