চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগ করায় দলবল নিয়ে সাংবাদিককে পেটালেন ডাক্তার
- ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১১:২৯ এম, ২২ মার্চ ২০২৫

ময়মনসিংহে দন্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় সাংবাদিককে প্রেসক্লাবের ভেতরে ফেলে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে।
শুক্রবার (২১ মার্চ) পর্যন্ত ওই সাংবাদিক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগে ভর্তি ছিলেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
আহত সাংবাদিক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের চর ঈশ্বরদিয়া খালপাড় এলাকার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। তিনি স্থানীয় দৈনিক ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও দৈনিক রুপালি বাংলাদেশ পত্রিকার ময়মনসিংহের নিজস্ব প্রতিবেদক।
মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, তার বাবা মোসলেম উদ্দিনের (৭০) এক সপ্তাহ দাঁতে ব্যথা হচ্ছিলো। তাকে গত ১২ মার্চ নগরীর শম্ভুগঞ্জ পশ্চিম বাজার এলাকার ‘অ্যাডভান্সড ডেন্টাল সলুশন’ নামে একটি দন্ত চিকিৎসালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই শিমু আক্তার নামে এক চিকিৎসক ব্যথা সৃষ্টিকারী দাঁত না ফেলে ভালো একটি দাঁত ফেলে কিছু ওষুধ লিখে দেন। ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরে মোসলেম উদ্দিন আরও বেশি দাঁতের ব্যথায় ভুগতে থাকেন। ওই দিন রাত ১১টার দিকে তিনি ভালো দাঁত ফেলার বিষয়টি বুঝতে পারেন।
পরদিন ১৩ মার্চ বিকেলে মোসলেম উদ্দিনকে শম্ভুগঞ্জ বাজার মোড়ের গোল চত্বর এলাকার ‘রীচ হেলথ সেন্টার’ নামের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেও আমিনুল ইসলাম নামে এক চিকিৎসক কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই মোসলেমকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় বসিয়ে দাঁত ফেলে দিয়ে ওষুধ লিখে দেন। ওষুধ খেয়েও ৩-৪ দিন ব্যথায় ভোগেন মোসলেম। এমন চিকিৎসার বিষয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাইলে উল্টো বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় গত বুধবার (১৮ মার্চ) দুপুরে সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় চিকিৎসক শিমু আক্তার ও আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
জানা যায়, অভিযোগের পর শম্ভুগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ফোন করে রাতে চা-পানের দাওয়াত দেন। রাত ৮টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আন্নান অভিযোগের তদন্ত করতে শম্ভুগঞ্জ পশ্চিম বাজারের অ্যাডভান্সড ডেন্টাল সলুশনে গিয়ে শিমু আক্তারকে না পেয়ে সাংবাদিককে ফোন করেন।
এদিকে, সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম শম্ভুগঞ্জ প্রেসক্লাবের নিচে গেলে চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসে থানায় অভিযোগ করায় গালাগালি শুরু করেন ও মারধরের চেষ্টা করেন। এসময় প্রেসক্লাবের সভাপতি আনোয়ার হোসেন পৌঁছালে তিনি মঞ্জুরুল, চিকিৎসক ও অন্যদের নিয়ে প্রেসক্লাবে সভাপতির কক্ষে প্রবেশ করেন।
কক্ষে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক ও তার সঙ্গে আসা লোকজন মঞ্জুরুলের মাথায় বেধড়ক কিল-ঘুষি দিতে থাকেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এসময় পুলিশ দেখে মারধরকারীরা পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে রীচ হেলথ সেন্টারের চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম ও অ্যাডভান্সড ডেন্টাল সলুশনের চিকিৎসক শিমুর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
শম্ভুগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, চিকিৎসক আমিনুল আমার ক্লাবের সদস্য। সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলামকে আমি চায়ের দাওয়াত দিয়েছিলাম। পরে আমার কক্ষে চিকিৎসক আমিনুল তার লোকজন নিয়ে সাংবাদিককে মারধর করেন।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরেছি। আহত সাংবাদিক সুস্থ হয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে মারধর করা ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. জাকিউল ইসলাম বলেন, আহত অবস্থায় মঞ্জুরুল ইসলাম নামে একজন সাংবাদিক বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের নাক-কান ও গলা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। এখনো তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।