হিন্দু ভাইয়েরাও আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করে নাই: জামায়াতের আমির


March 2025/Jamaat Hindu.jpg

হিন্দু ভাইয়েরাও আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনেননি বলে মন্তব্য করেছন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। 

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ১২ বছর। অথচ আমার নামে যুদ্ধাপরাধের মামলার দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।’

পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর দিন আজ মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, ‘আমি কি যুদ্ধাপরাধী? না, অথচ আমার ওপর যুদ্ধাপরাধের মামলা দেয়ার চেষ্টা করেছে। যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল সাড়ে ১২ বছর। সাড়ে ১২ বছরের ছেলে যুদ্ধের সময়ে মানুষ খুন করতে পারে- এটা বিশ্বাসযোগ্য কথা? তাও চেষ্টা করা হয়েছে।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগও দেয়নি, সাক্ষ্যও দেয়নি। হিন্দু ভাইয়েরাও তাতে রাজি হয়নি। আমি সেই সময় জামায়াতে ইসলামীও করতাম না। আমি অন্য একটা সংগঠন করতাম। যেটা বলতে এখন লজ্জা হয়।’

কুলাউড়া শহরের ঐতিহ্যবাহী ডাকবাংলো মাঠে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আব্দুল মুন্তাজিমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বেলালের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট মহানগরীর আমির মো. ফখরুল ইসলাম।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিগত জালিম সরকারের আমলে আমরা ১১ জন শীর্ষ নেতাকর্মীকে হারিয়েছি। ৫ শতাধিক মানুষ পঙ্গু হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ হামলা-মামলার শিকার হয়ে দেশ ছেড়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল। আগস্টের ১ তারিখ আমাদের নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় আল্লাহকে বলেছিলাম; ৪ দিন পর আল্লাহর বিচার হয়েছে। জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদের সঙ্গে আমরাও ছিলাম। জালিমের মাথা আল্লাহ গুঁড়িয়ে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘২৬ হাজার কোটি টাকা শুধু আওয়ামী লীগের নেতারা পাচার করেছে। প্রশাসন কত টাকা পাচার করেছে আল্লাহই ভালো জানেন। তাদের ভাব ছিল এমন- তারা রাজা আর আমরা প্রজা। ওই সরকার কারো সঙ্গে ভালো আচরণ করেনি। ৭ বছরের শিশুও আন্দোলন করেছে। এক মা দুধের শিশু সন্তান কোলে নিয়ে আন্দোলনে এসেছেন। সন্তানদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার জন্য তিনি আন্দোলনে নেমেছিলেন বলে সাংবাদিকদের বলেছেন। এটা ছিল জুলাই বিপ্লব।’

জামায়াত আমির বলেন, ‘আমি প্রত্যেকটা শহিদের বাড়িতে যদি যেতে পারতাম। তাদের সন্তান কোলে নিতে পারতাম। যাদের বাড়ি গিয়েছিলাম তাদের জিজ্ঞেস করেছি কেমন আছেন, তারা শুধু টপটপ করে চোখের পানি ফেলেছেন। জানতে চেয়েছিলাম-কি চান? তারা বলেছিলেন, জালিমের হাতে দেশটা যেন আর না যায়। দেশটা আপনাদের হাতে দেখতে চাই। এমন একটা দেশ দেখতে চাই চাঁদাবাজ, ঘুষখোর ও সুদখোরদের ঠাঁই হবে না। আপনাদের চাওয়াই কি এক? যদি এক হয়, তাহলে লড়াই আমাদের শেষ না, লড়াই শুরু। শহিদের পরিবারের চোখের পানি যতদিন থাকবে আমাদের এই লড়াই চলবে। যতদিন এই দেশে আল্লাহর আইন, মানবতার আইন, মানবিক আইন প্রতিষ্ঠিত না হয়; ততদিন আমাদের লড়াই চলবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আল্লাহ জালিমের কবল থেকে মুক্ত করেছেন। ফিলিস্তিনকেও যেন আল্লাহ জালিমের হামলা থেকে মুক্ত করে দেন।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘কুলাউড়া উপজেলায় ৩৪ চা বাগান রয়েছে। তারা হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করেন। আমরা আগেও দাবি তুলেছি শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত হয়। আমরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী চাই না, যাদের ভিতর মনুষ্যত্ব নেই। আমরা চাই প্রকৃত মানুষ। যারা মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করবেন, তাদের প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেখানে হিন্দু-মুসলিম কিংবা মেজরিটি মাইনরিটি বলে কিছু থাকবে না।’


শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘দুঃশাসন এবং জুলুমের কারণে আপনাদের মুখ দেখতে পারিনি। আজ প্রাণখুলে দেখতে চাই।’

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×