
খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে ডাকা অবরোধ কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করেছে জুম্ম ছাত্র-জনতা। শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে তাদের মিডিয়া সেলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শহীদদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পুণ্যকর্ম সম্পাদন, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি মানবিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি প্রশাসনের আশ্বাসকে আংশিকভাবে বিবেচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জুম্ম ছাত্র-জনতা জানায়, খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে গত ১ অক্টোবর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ ও গোয়েন্দা প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের দ্বিতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বৈঠকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার ও সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ৮ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবিসমূহ বাস্তবায়নের আশ্বাস এবং শহীদ পরিবারের জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদানের বিষয়টি জানানো হয়।
এর আগে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে এক মারমা স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের জেরে জুম্ম ছাত্র-জনতা অর্ধদিবসের সড়ক অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরপর, ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদ এলাকায় অবরোধকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। এতে বহু দোকানপাট লুটপাট ও ভাঙচুর হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা সদর ও পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। গুইমারাতেও ওই দিন ইউএনও ১৪৪ ধারা জারি করেন।
২৮ সেপ্টেম্বর ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গুইমারায় অবরোধ পালনকে কেন্দ্র করে আরও সহিংসতা ঘটে। এ ঘটনায় তিনজন স্থানীয় পাহাড়ি যুবক নিহত হন। এছাড়া, সেনাবাহিনীর মেজরসহ ১৩ জন সেনা, থানার ওসি ও পুলিশ সদস্য এবং ২০-২৫ জন স্থানীয় মানুষ আহত হন। দুষ্কৃতিকারীদের অগ্নিসংযোগে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরির বাসভবনসহ রামসুপাড়া বাজার এলাকার সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসা ও বাড়িঘর ধ্বংস হয়।
একই দিনে রামগড় সড়কের দাতারামপাড়া এলাকায় অবরোধকারীদের সঙ্গে বিজিবি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে, যেখানে কয়েকজন বিজিবি সদস্য আহত হন।
২৯ সেপ্টেম্বর জুম্ম ছাত্র-জনতা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে বৈঠকে বসেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আন্দোলনকারীরা তাদের ৮ দফা দাবি পূরণের অনুরোধ জানান এবং উপদেষ্টা পর্যায়ক্রমে দাবিগুলো পূরণের আশ্বাস দেন।
এরপর, দুর্গোৎসব এবং দাবির বাস্তবায়নের আশ্বাসে ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত করা হয়।
পুলিশ ও জেলা প্রশাসন ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। যদিও ধর্ষণের অভিযোগে ডাক্তারি পরীক্ষায় কিশোরীর শরীরে ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে গুইমারা ও খাগড়াছড়িতে সহিংসতায় পুলিশ পৃথক তিনটি মামলা করেছে, যার মধ্যে এক হাজারেরও বেশি অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।