
রাজশাহীতে ক্রমেই বাড়ছে এইচআইভি (এইডস) সংক্রমণ। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে নতুন করে ২৮ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে এইডসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহীতে সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্তদের জন্য একটি ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রামেকের এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং (এইচটিসি) সেন্টারের তথ্যানুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১২ হাজার ৪৬৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৯৩ জনের শরীরে এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ, ২ জন নারী ও ১ জন তৃতীয় লিঙ্গের। একই সময়ে এই ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে আটজনের। আক্রান্তদের অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন এখানে পরীক্ষা করাতে আসেন। যাদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে তাদের কাউন্সেলিং করে বলা হয়, “এইচআইভি সম্পূর্ণ নিরাময় না হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অর্থাৎ নিয়মিত চিকিৎসা এবং ওষুধ সেবনে আক্রান্তরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।”
২০১৯ সালে রামেক হাসপাতালে প্রথমবার এইচআইভি পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম বছর ৭৭ জনের নমুনায় কারও দেহে ভাইরাস পাওয়া যায়নি। ২০২০ সালে দুই জন, ২০২১ সালে ৮ জন, ২০২২ সালে ৮ জন, ২০২৩ সালে ২৪ জন, ২০২৪ সালে ২৭ জন এবং ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ২৮ জনের দেহে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালে শনাক্ত ২৭ জনের মধ্যে ১৬ জন সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। যৌনকর্মীর মাধ্যমে ১০ জন ও রক্তের মাধ্যমে একজন আক্রান্ত হন। চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত শনাক্ত ২৮ জনের মধ্যে ১৭ জন সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে, ১০ জন যৌনকর্মীর মাধ্যমে এবং একজন রক্তের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি বলেন, “রোগটি বহনের তথ্য জানার পর মনে হয়েছিল সব শেষ। রামেকে কাউন্সেলিংয়ের পর বুঝলাম, এটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। নিয়মিত ওষুধে ভালো থাকা যায়। তবে রাজশাহীতে চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবস্থা না থাকায় বগুড়ায় যাওয়া কষ্টকর। এখানে ওষুধ পেলে, স্বস্তি পেতাম।”
বর্তমানে রামেকে শুধুমাত্র এইচআইভি পরীক্ষা ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে, তবে চিকিৎসা সুবিধা নেই। এজন্য আক্রান্তদের চিকিৎসা ও ওষুধের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে যেতে হয়। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় রামেকে ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রামেক হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারের কাউন্সেলর রেজাউল করিম বলেন, নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, কেউ কেউ আত্মহত্যার কথাও ভাবেন। তাদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, “এইচআইভি রোগীদের চিকিৎসার জন্য আমরা একটি ট্রিটমেন্ট সেন্টার চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। রুম রেনোভেশনের কাজ চলছে। শিগগিরই এটি চালু হলে এইচআইভি পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসার জন্য আর বগুড়ায় যেতে হবে না।”
রাজশাহী এইচটিসি সেন্টারের ফোকাল পারসন ডা. ইবরাহীম মো. শরফ বলেন, “অরক্ষিত যৌন মিলন; নারী-পুরুষে অথবা পুরুষ-পুরুষে মিলন, এইচআইভি সংক্রমণের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। এছাড়া গর্ভকালীন সময়, সন্তান জন্ম ও বুকের দুধ পানে মা থেকে শিশুর শরীরে এইচআইভি সংক্রমণ হতে পারে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।”